ফেব্রুয়ারির আট দিনই দিল্লিকে পিছনে ফেলে ‘দূষণশ্রী’ শহর

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, বায়ুসূচকের (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) মাপকাঠি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথম পনেরো দিনের মধ্যে আট দিনই দিল্লির বাতাসের থেকে কলকাতার বাতাসের মান খারাপ ধরা পড়েছে। শুধু তাই নয়, ওই দু’সপ্তাহে গড়ে ৮৫টা শহরের বাতাসের মান পরিমাপ করেছিল পর্ষদ, সেখানে প্রতিবারই প্রথম দশটি দূষিত শহরের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে কলকাতা!

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২৩
Share:

দূষণ: ধুলো-ধোঁয়া থেকে বাঁচতে যানশাসনে ব্যস্ত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর ভরসা এক টুকরো কাপড়ই। ডানলপ মোড়ে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

ফের বায়ুদূষণের নিরিখে দিল্লিকে পিছনে ফেলল কলকাতা। এ বার এক দিন, দু’দিন নয়। ধারাবাহিক ভাবে আট দিন!

Advertisement

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, বায়ুসূচকের (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) মাপকাঠি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথম পনেরো দিনের মধ্যে আট দিনই দিল্লির বাতাসের থেকে কলকাতার বাতাসের মান খারাপ ধরা পড়েছে। শুধু তাই নয়, ওই দু’সপ্তাহে গড়ে ৮৫টা শহরের বাতাসের মান পরিমাপ করেছিল পর্ষদ, সেখানে প্রতিবারই প্রথম দশটি দূষিত শহরের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে কলকাতা!

পর্ষদের তথ্যে যা ধরা পড়েছে তাতে উদ্বেগের আরও কারণ থাকছে। কারণ, ওই ১৫ দিনের মধ্যে এক দিনও শহরের বাতাসের মান ‘ভাল’ বা ‘সন্তোষজনক’ ছিল না। প্রসঙ্গত, বাতাসের মানের প্রেক্ষিতে বায়ুসূচকের ছ’টি ভাগ রয়েছে।—‘ভাল’ (বায়ুসূচকের মাত্রা-০-৫০), ‘সন্তোষজনক’ (৫১-১০০), ‘মাঝারি’ (১০১-২০০), ‘খারাপ’ (২০১-৩০০), ‘অত্যন্ত খারাপ’ (৩০১-৪০০) এবং ‘মারাত্মক’ (৪০১-৫০০)। ছ’টি মাত্রাই নির্ধারিত হয়েছে নির্দিষ্ট পরিসরে দূষকের ঘনত্ব ও স্বাস্থ্যের উপরে তাদের ক্ষতিকর প্রভাব অনুযায়ী। যাকে আভিধানিক ভাবে বলা হয় ‘হেলথ ব্রেকপয়েন্টস’। সে দিক থেকে দেখা যাচ্ছে, ওই ১৫ দিনের মধ্যে ১০ দিন শহরের বাতাসের মান ছিল ‘খুব খারাপ’। দু’দিন ছিল ‘খারাপ’। মাত্র তিন দিন দূষণের মাত্রা ছিল ‘মাঝারি’ মাত্রার। তার মধ্যে পয়লা ফেব্রুয়ারি সারা দেশের সব থেকে দূষিত শহরের মধ্যে কলকাতার ছিল দ্বিতীয়! শনিবারও শহরের বাতাসের মান ছিল ‘খারাপ’। এ দিন বিকেল ৪টেয় কলকাতার বায়ুসূচকের মান ছিল ২৫৪। দিল্লির সেখানে ছিল সামান্য বেশি, বায়ুসূচকের মান ২৭৬।

Advertisement

এই অস্বাভাবিক দূষণের জন্য শহরের পুরনো যানবাহনকে দায়ী করছেন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, পুরনো গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা ছাড়া অন্য কোনও পদক্ষেপ করেনি রাজ্য। যত দিন না সেটা করা হবে, তত দিন এই পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হবে না বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘দূষণ নিয়ে গা-ছাড়া মনোভাব দেখালে হবে না। এটাতে যত দিন না গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তত দিন কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’’

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা আরও একটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তা হল দিল্লিতে দূষণের বিষয়ে নজরদারি করার জন্য প্রতিদিন ‘মনিটরিং দল’ বেরোয়। কোথাও নির্মাণ দূষণ ছড়াচ্ছে কি না, কোথাও আবর্জনা পোড়ানো হচ্ছে কি না, তারা তা ঘুরে ঘুরে দেখে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ তা চালু করলেও পর্যাপ্ত নয়। ফলে পুরো শহরে নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। কেন্দ্রীয় দূষণ পর্ষদের আরেক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘নজরদারি দলের সংখ্যা বাড়াতে হবে। দিল্লিতে শ’খানেক এমন দল বেরোয় যারা নজরদারি করে। এখানে মাত্র ১০টার মতো দল বেরোয়। ফলে পার্থক্য তো হবেই।’’

যদিও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘আবহাওয়ার বিষয়টি কিন্তু ভুললে চলবে না। কারণ, শীতে দিল্লিতে বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতায় বৃষ্টিই হয়নি। হাওয়ারও কোনও গতি নেই। ফলে বাতাসের জমা দূষণ ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। দূষণ কমবে কী ভাবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement