এই বাজার ঘিরেই উত্তপ্ত এলাকা। রবিবার, জোড়াবাগানে। নিজস্ব চিত্র
মানিকতলার পরে উত্তর কলকাতার সব থেকে বড় বাজার এটি। প্রায় দুশো বছরের পুরনো জোড়াবাগানের সেই নতুন বাজার নিয়েই বেশ কিছু দিন থেকে রাজনৈতিক লড়াই চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাঁরা জানান, শুক্রবার রাতে বাজারের ব্যবসায়ীদের দু’পক্ষের গন্ডগোলে সেই লড়াই চরম আকার নেয়। ইতিমধ্যেই আহত হয়ে কয়েক জন হাসপাতালে ভর্তি। ওই রাতে ছ’জনকে গ্রেফতার করার পরে শনিবারও মনোজ পরাশর নামে এক ব্যক্তিকে ধরা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, তিনি ওই বাজার কমিটির সম্পাদক।
কলকাতা পুরসভার খাতায় ৩১৩, রবীন্দ্র সরণির ওই বাজার তৈরি হয়েছিল রাজা রাজেন্দ্র মল্লিকের সময়ে। বাজারে এখন কম করে ৯০০ ব্যবসায়ী রয়েছেন। বর্তমানে বাজারটি একটি ট্রাস্টের অধীনে। বিনয় দুবে নামে এক প্রোমোটার সেই ট্রাস্টের থেকে বাজারটি লিজ়ে নিয়েছেন বলে খবর। ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, বাজার তুলে বিনয় একটি শপিং মল করতে চান ওখানে। এ নিয়েই গত লোকসভা ভোটের আগে থেকে গোলমালের সূত্রপাত ওই এলাকায়। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘শপিং মল হলে সেখানে কখনই ৯০০ ব্যবসায়ীর জায়গা হবে না। আমাদের তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ ভোটের আগেই বাজারের ধর্না মঞ্চে বসেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। বড়বাজারের কাছের এই বাজার-আন্দোলন নিয়ে প্রথম থেকেই তৎপর বিজেপি। ধর্না মঞ্চে দেখা গিয়েছিল গত লোকসভা ভোটে উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহকে। ভোট মিটতেই অবশ্য সেই মঞ্চ উঠে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন প্রতিবাদী ব্যবসায়ীদের উপরে চড়াও হচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। শুক্রবার রাতেও সেই থেকেই ঝামেলার শুরু। বিশ্বনাথ সোনকার নামে এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘প্রোমোটারের সঙ্গে এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলরের লোক যুক্ত রয়েছে। তারাই ব্যবসায়ীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। ওরাই ওই রাতে অনেক ব্যবসায়ীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। যাঁরা মার খেয়েছেন, এখন তাঁদেরই ধরেছে পুলিশ!’’ তাঁর আরও দাবি, এলাকার এক সভাঘরে শনিবার গিয়েছিলেন বিদায়ী রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তাঁর সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর পথেই নতুন বাজার কমিটির সম্পাদক মনোজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এলাকায় তিনি সমাজসেবী হিসেবেও পরিচিত।
বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের অভিযোগ, ‘‘ওখানে তৃণমূল রাজনীতি করে ব্যবসায়ীদের তুলে দিতে চাইছেন। মারধর করে ঝামেলা পাকানো হচ্ছে। এ সব মেনে নেব না।’’ এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। তাঁর ওয়ার্ডের বাজারের সমস্যায় রাজনৈতিক রং লাগতে দিতে চান না কাউন্সিলর ইলোরা সাহা। তিনি বললেন, ‘‘কয়েক জন সমাজসেবী সেজে ব্যবসায়ীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন। আমি বলেছি, এক জায়গায় বসে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করুন। কারণ, বাজারটা সকলের।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বাজারে বহু ব্যবসায়ীর ভাড়ার রসিদ নেই। তবু তাঁদের তুলে দেওয়া যায় না। আমরা ব্যবসায়ী উচ্ছেদের পক্ষে নই। বাজারের পাশে ৩০৯, ৩১০ এবং ৩১১ নম্বরে তিনটি বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির বাসিন্দাদেরই বা পুনর্বাসনের কী হবে, সেটাও দেখতে হবে। দু’পক্ষই আলোচনায় বসুক।’’