রাজন্য সরকার
প্রথম বারের মতো তদন্তে যাতে খামতি না থাকে, তার জন্য সাউথ পয়েন্ট স্কুলের পড়ুয়া রাজন্য সরকারের মৃত্যুর পুনর্তদন্তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামতেই নির্ভর করতে চায় পুলিশ। বেসরকারি হাসপাতালের যে সব চিকিৎসক ওই ছাত্রের চিকিৎসা করেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ফের কথা বলতে চায় পুলিশ। ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা রাজন্যের বাবা-মায়ের সঙ্গে দু’দফায় কথা বলেছেন। তাঁদের বয়ান রের্কডও করা হয়েছে। পাশাপাশি, পুনর্তদন্তে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা আদালতকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগ, প্রথম বারের তদন্ত রিপোর্টে চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের কোনও বক্তব্য ছিল না। স্কুলের সিসিটিভি-র ফুটেজও জমা দেয়নি বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছাত্রের পরিবারের। পরে ওই রিপোর্ট নিয়ে করে আদালতে যায় রাজন্যের পরিবার। গত জুলাই মাসে ওই মামলার শুনানিতে আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সৌগত রায়চৌধুরী নির্দেশ দেন, গ়ড়িয়াহাট থানাকে এই ঘটনার ফের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে। এ বার গোড়া থেকেই আটঘাট বেঁধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার। প্রথমেই ওই ছাত্রের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। গত মাসেই আদালতে ওই তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানিয়ে জন্য আরও সময় চেয়েছে পুলিশ। যার ভিত্তিতে তদন্তকারীদের আদালত সময় দিয়েছে। আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘পুলিশ নতুন করে তদন্তে কী কী করছে, তাতে আমরা নজর রাখছি। গাফিলতি দেখলে ফের আদালতের দ্বারস্থ হব।’’
তদন্তকারীরা জানান, প্রথম বারের তদন্তের সময়েও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত নেওয়া হয়েছিল। এ বারও তা করা হচ্ছে। একেবারে প্রথম থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। মাথায় রাখা হচ্ছে সব ধরনের সম্ভাবনার কথাই। তাই স্কুলে ওই সময়ে উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে অশিক্ষক কর্মী ও অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলা হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ফের খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশের এক কর্তা জানান, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বাকিদের সঙ্গেও কথা বলে আদালতে জানানো হবে।
পুলিশ জানায়, প্রথম শ্রেণিতে পড়ত রাজন্য। ২০১৪ সালের ৮ মে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ স্কুলের তিনতলায় কম্পিউটার ক্লাসের সামনে রাজন্যকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায়। এর পরেই তাঁরা রাজন্যকে ‘সিক রুমে’ নিয়ে যান। সেখানে থাকা নার্সিং কর্মী রাজন্যকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। স্কুলের বাসে চাপিয়েই ওই পড়ুয়াকে স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনার পরেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনে পুলিশের দ্বারস্থ হয় রাজন্যের পরিবার। তার মা রুচিরা সরকার বলেন, ‘‘ফের ঠিক ভাবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলে ছেলের মৃত্যুর কারণ যেমন জানা যাবে, তেমনই বেসরকারি স্কুলগুলির ভিতরে যে অব্যবস্থা রয়েছে, তা-ও প্রকাশ পাবে।’’
২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে আদালতে দেওয়া রিপোর্টে পুলিশ দাবি করে, ঘটনাটি ১২ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘটেছিল। তদন্তে স্কুল কর্তৃপক্ষ বা স্কুলের কর্মীদের কারও গাফিলতি ছিল না। সেই সময়ে রাজন্যের মৃত্যুর কারণ জানতে যে ভিসেরা পরীক্ষা হয়েছিল, তার রিপোর্টও জমা দেন তাঁরা। কিন্তু তাতে খুন বা গাফিলতির জেরে মৃত্যুর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।