(ডান দিক) উদ্ধারের সেই মুহূর্ত। উদ্ধার হওয়ার পরে কালিন্দী মণ্ডল (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
জোয়ারের সময় হিসাব করে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন। ৭০ বছরের বৃদ্ধা কালিন্দী মণ্ডল ভেবেছিলেন কাজটা তাতে অনেক সহজ হয়ে যাবে। জোয়ারের প্লাবন দ্রুত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তাঁর শরীর। শেষ পর্যন্ত তাঁর সেই ইচ্ছা অবশ্য পূরণ হয়নি। জোয়ারের প্লাবন থেকে মোক্ষম মুহূর্তে কালিন্দিকে টেনে তোলে কলকাতা পুলিশের স্পিডবোট। বেঁচে যাওয়ার পরে স্পিডবোটে বসেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধা।
বুধবারের ঘটনা। বেলা ১১টা ৫ মিনিটে কলকাতার নর্থ পোর্ট থানায় খবর আসে, এক মহিলা নদীর উত্তর দিক থেকে বাবুঘাটের দিকে ভেসে যাচ্ছেন। খবর পাওয়ার দু’মিনিটের মধ্যে ইনস্পেক্টর ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দুই কর্মীকে নিয়ে একটি স্পিডবোটে বেরিয়ে পড়েন উদ্ধার অভিযানে। ১১টা ১৫ মিনিটে গঙ্গার স্রোতে ভেসে যাওয়া বৃদ্ধাকে চিহ্নিত করে দলটি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁকে লক্ষ্য করে একটি ‘লাইফ রিং’ ছুড়ে দেওয়া হয়। তাঁকে উদ্ধার করতে জলে ঝাঁপ দেন এক বিপর্যয় মোকাবিলাকর্মীও।
পুলিশ জানিয়েছে, জোয়ার-ভাটার সময় অনুযায়ী সাড়ে ১১টা নাগাদ গঙ্গায় জোয়ারের প্লাবন আসার কথা ছিল বাবুঘাটের কাছে। সেই প্লাবনের স্রোতের মুখে পড়লে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা তো দূর, তাঁকে খুঁজেই পাওয়া যেত না। মৃত্যু একরকম অবধারিতই ছিল তাঁর। দ্রুত পদক্ষেপ করায় বিপদ ঘনিয়ে ওঠার আগেই বাঁচানো গিয়েছে ওই বৃদ্ধাকে।
আপাতত পুলিশের সুরক্ষা হেফাজতে রয়েছেন ওই বৃদ্ধা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, তিনি একা থাকেন। তাঁর স্বামী জীবন মণ্ডল প্রয়াত হয়েছেন। সল্টলেকে এক চিকিৎসকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন তিনি। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকা শারীরিক অক্ষমতা এবং একাকিত্ব তাঁকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। তা থেকে মুক্তি পেতেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। নদীতে জোয়ার কখন আসবে জেনে নিয়েই ঝাঁপ দেন গঙ্গায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। পুলিশের প্রকাশ করা ওই মহিলাকে উদ্ধারের ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, তাঁকে টেনে স্পিডবোটে তোলার পরও কাঁদতে কাঁদতে ক্রমাগত মাথা নেড়ে চলেছেন তিনি। যদিও তিনি ঠিক কী বলছেন, তা শোনা যায়নি।