বিদায়: স্বামীর দেহ আঁকড়ে স্ত্রী। সোমবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
সকাল আটটা নাগাদ হঠাৎই বেজে উঠেছিল সোনারপুর থানার কর্তব্যরত অফিসারের ফোন। ও-পারের ব্যক্তি তাঁকে বলেন, ‘‘স্যার, বৈকুণ্ঠপুর এলাকায় লরির চাকায় পিষে এক জন মারা গিয়েছে।’’ সোমবার সকালে ফোনটা রাখার পরে আর সময় নষ্ট করেননি কৃষ্ণানন্দ পাণ্ডে নামে ওই অফিসার। ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য থানার সাব ইনস্পেক্টর রাজেশ দাসকে ফোন করেন তিনি। কিন্তু প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বেজে যায় মোবাইল।
এর পরেই বৈকুণ্ঠপুর এলাকার কাছাকাছি টহলদার পুলিশ ভ্যানকে খবর দেন কৃষ্ণাবাবু। ওই ভ্যানের পুলিশকর্মীরাই জানান, দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন রাজেশ নিজেই। খবর পেয়েই সহকর্মীরা তড়িঘড়ি গাড়ি নিয়ে বৈকুণ্ঠপুরে গিয়ে গুরুতর জখম অবস্থায় রাজেশকে সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা ওই অফিসারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সোনারপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, আদতে রানাঘাটের বাসিন্দা রাজেশ বৈকুণ্ঠপুরে বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। সম্প্রতি তাঁর পদোন্নতি হয়েছিল। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ মোটরকবাইকে চেপে ডিউটিতে আসছিলেন রাজেশ। বাইকের সামনে ছিল একটি লরি। তাড়া থাকায় লরিটিকে টপকে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন রাজেশ। আচমকা মোটরবাইকের সামনে চলে আসেন এক মহিলা। তাঁকে বাঁচাতে সজোরে ব্রেক কষেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, আচমকা ব্রেক কষায় মোটরবাইকটি পিছলে যায়। রাজেশ ছিটকে পড়ে চলন্ত লরির পিছনের চাকায় পিষে যান। তাঁর বুকের উপর দিয়ে চলে যায় লরির চাকা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই অফিসারের। ময়না-তদন্তের পরে এ দিন রাজেশের দেহ সোনারপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। রাজেশের স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। বারুইপুর জেলা পুলিশের সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যু হলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আমরা সেই ব্যবস্থা করছি।’’
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজেশ মূলত এলাকায় নজরদারি করতেন। এ দিন সকালেও একটি মামলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে থানায় ফিরছিলেন। হয়তো রবিবার রাতে কর্তব্যরত অফিসারকে ছুটি দিতেই একটু তাড়াহুড়ো করেছিলেন। মাথায় হেলমেটও ছিল। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল, বুঝতেই পারলাম না।’’