Driver

ভাড়ার চালকে বিপদ! পুলিশ হাঁটতে পারে কড়া ধারার পথে

এই পরিস্থিতিতে এমন চালক ও সংস্থার বিরুদ্ধে এ বার ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ বা এসওপি প্রকাশ করতে চলেছে পুলিশ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:১৬
Share:

‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ বা এসওপি প্রকাশ করতে চলেছে পুলিশ। —প্রতীকী চিত্র।

কোনও ক্ষেত্রে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার পরে জানা যাচ্ছে, চালকের লাইসেন্সই ছিল না! কোনও ক্ষেত্রে পুলিশ দেখছে, শিক্ষানবিশ (লার্নার) লাইসেন্স নিয়েই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন চালক। বহু ক্ষেত্রে আবার সামনে আসছে, গাড়ি চালানোর কোনও রকম পরীক্ষা না দিয়েই চালক লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছেন। বর্ষশেষের উৎসবের মরসুমের আগে এমন চালকদের নিয়েই এ বার কড়া অবস্থান নিচ্ছে লালবাজার। পুলিশ দেখেছে, এমন চালকদের বেশির ভাগই গাড়িচালক ভাড়া দেওয়ার কোনও না কোনও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। এই পরিস্থিতিতে এমন চালক ও সংস্থার বিরুদ্ধে এ বার ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ বা এসওপি প্রকাশ করতে চলেছে পুলিশ।

Advertisement

লালবাজার সূত্রের খবর, গত তিন মাসে শহরে এমন ২৬টি পথ দুর্ঘটনার অভিযোগ জমা পড়েছে, যেখানে ভাড়া নেওয়া চালক গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সেই সমস্ত গাড়ির মালিকদের কেউ লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, চালক অপটু ছিলেন বা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি ছোটাচ্ছিলেন। সেই সময়ে সাবধানে চালাতে বললেও শোনেননি। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর এবং ক্লান্ত শরীরে ‘ওভারটাইম’ করারও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। লালবাজারেরই একটি হিসাব বলছে, শীতের এই সময়ে প্রতি বারই পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ে। মূলত বর্ষশেষ এবং বর্ষবরণের উৎসব ঘিরে অনেকেই চালক ভাড়ায় নেন। বহু পানশালা এবং রেস্তরাঁও পার্টি-ফেরত লোকজনের জন্য চালক ভাড়ায় নেয়। এই পরিস্থিতিতে এমন চালকদের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে বলে লালবাজারের এক পুলিশকর্তার দাবি।

তদন্তে পুলিশ দেখেছে, পুরসভার হিসাব অনুযায়ী, শহরে এই মুহূর্তে প্রায় দেড় হাজার এমন নথিভুক্ত সংস্থা রয়েছে, যারা গাড়ির চালক ভাড়ায় দেয়। কিন্তু এমন সংস্থার সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে পুলিশের দাবি। বহু ক্ষেত্রে পুরসভার কাছে
তথ্য থাকে না। পুলিশেরও এ ব্যাপারে এত দিন তেমন হেলদোল ছিল না বলে অভিযোগ। এই সময়ে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার বাড়ে, যেখান থেকে চাইলেই চালক ভাড়ায় পাওয়া যায়। কিন্তু অভিযোগ, শুধুমাত্র লাইসেন্স থাকলেই এমন অ্যাপে চালক হিসাবে নাম নথিভুক্ত করানো যায়। যিনি ভাড়ায় নিচ্ছেন, তাঁর দেখে নেওয়ার উপায়ই থাকে না যে চালক কেমন! এমনই একটি অ্যাপ-নির্ভর সংস্থায় কাজ করা এক চালক আবার বললেন, ‘‘২৫ এবং ৩১ ডিসেম্বর চাহিদা থাকে সব চেয়ে বেশি। তখন ওভারটাইমও করতে হয়। যে হেতু ৫ জানুয়ারির পরে টাকা মেটানো হয়, তাই ক্লান্তি নিয়েও কাজে যেতে হয়। নয়তো অ্যাপ সংস্থা সমস্ত টাকা আটকে দেয়।’’

Advertisement

দিনকয়েক আগে রেড রোডে দ্রুত গতিতে চলার সময়ে উল্টে যায় একটি গাড়ি। তাতে এক মহিলা এবং তাঁর শাশুড়ি ছিলেন। জানা যায়, গাড়িটি যিনি চালাচ্ছিলেন, তাঁকে অ্যাপ-নির্ভর সংস্থা থেকে ভাড়ায় নেওয়া হয়েছিল। দু’মাস আগেই লাইসেন্স পান ওই চালক। সারা রাত গাড়ি চালিয়ে তার পরে ফের ওই দু’জনকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ক্লান্তি থেকেই তাঁর চোখ লেগে গিয়েছিল, জেরায় ওই চালক এমনটাই জানিয়েছেন বলে লালবাজারের দাবি।

এই পরিস্থিতিতে পুলিশ যে এসওপি প্রকাশ করতে চলেছে, তাতে ক্লান্ত অবস্থায় কোনও ভাবেই গাড়ি না চালানোর উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। যে সংস্থা চালক ভাড়ায় দেওয়ার ব্যবসা করবে, তাদের চালকদের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য লিখিত আকারে রাখতে হবে। রিজিয়োনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসারের (আরটিও) দফতর থেকে এমন সংস্থার উপরে নজরদারি চালানো হবে। আরটিও থেকে এমন সংস্থার নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে, যাতে সেখান থেকেই নিশ্চিত হয়ে কেউ চালক ভাড়ায় নিতে পারেন। যে রেস্তরাঁ এবং পানশালা চালক ভাড়ায় নেবে, তাদেরই চালক সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জেনে নিতে হবে। পুলিশের দাবি, বেশি জোর দেওয়া হবে লার্নার্স লাইসেন্স নিয়ে যাতে কেউ গাড়ি না চালান, সে ব্যাপারে। এ ক্ষেত্রে খুনের চেষ্টার মতো ধারাতেও মামলা রুজু করা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement