ঠিক কী কারণে ঝুন্নুকে খুন করা হল, তা নিয়ে তদন্তকারীরা এখনও ধন্দে। ফাইল ছবি।
ট্যাংরার যুবক ঝুন্নু রানাকে মাথায় হাতুড়ির ঘা মেরে খুন করেছিল গোলাম রব্বানির স্ত্রী আয়েশা। ধৃত ওই দম্পতিকে লাগাতার জেরা করার পরে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু ঠিক কী কারণে ঝুন্নুকে খুন করা হল, তা নিয়ে তদন্তকারীরা এখনও ধন্দে। আয়েশা ওগোলামের দাবি, ঝুন্নু আয়েশার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সেইকারণেই তাঁকে হাতুড়ির ঘা মারা হয়। যদিও বিষয়টি পুরোপুরি বিশ্বাস করছেন না তদন্তকারীরা। এ দিকে, ওই ঘটনার ১৭ দিন পরেও মেলেনি ঝুন্নুর মৃতদেহ। গোলাম ও আয়েশা পুলিশকে জানিয়েছিল, ঝুন্নুকে খুনের পরে তার দেহটি তপসিয়ারখালে ফেলা হয়। সেই খালে দিনের পর দিন তল্লাশি চালালেও ঝুন্নুর দেহ পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ৫৬ তালাও নামে তিলজলার একটি জলাশয়ের ধার থেকে ঝুন্নুর জামা, প্যান্ট ও বেল্ট পাওয়া গিয়েছে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গোলাম ও আয়েশার বাড়িতেই মাথায় হাতুড়ি মেরে খুন করা হয়েছিল ঝুন্নুকে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ওই দম্পতি দাবি করেছে, ৩ মার্চ সকালে ঝুন্নু তাদের বাড়িতে আসে। সে সময়ে গোলাম বাড়িতে ছিল না। দোকানে গিয়েছিল চা-বিস্কুট আনতে। বাড়িতে একাই ছিল আয়েশা।তাদের অভিযোগ, ঝুন্নু ওই সময়ে আয়েশার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। আয়েশা বাধা দেয় এবং ঝুন্নুর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে সজোরে আঘাত করে। ঘরের ভিতরে ঝুন্নু লুটিয়ে পড়েন। দেখা যায়, তাঁরমৃত্যু হয়েছে। পরদিন ভোরে গোলামের ভাই ইমরান এবং আত্মীয় শেখ রিয়াজ মিলে ঝুন্নুর দেহ একটি নীল ড্রামে ভরে। তার পরে সাইকেল ভ্যানে চাপিয়ে সেটি তপসিয়া খালে ফেলে দিয়ে আসে। যদিও খুনের কারণ নিয়ে এখনও সন্দিহান তদন্তকারীরা।
দিল্লি থেকে ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করার পরেই বাকি দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। খুনের ঘটনায় বাকি দু’জন সরাসরি জড়িত না থাকলেও তারা সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং দেহ লোপাট করতে সাহায্যকরেছিল। বাড়ির দেওয়ালে লাগা রক্তের দাগ মুছতে সেটি রংকরিয়েছিল ইমরান। পুলিশের এক কর্তা জানান, দিল্লিতে ধরা পড়ার সময়ে আয়েশা এবং গোলাম, দু’জনেই দাবি করে যে, আয়েশার সঙ্গে শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করার জেরেইহাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল ঝুন্নুকে। তাতেই তিনি মারা যান। যদিও পুলিশ এখনই এইতত্ত্ব মানতে নারাজ। কারণ হিসাবে তদন্তকারীরা বলছেন, স্বামী-স্ত্রীর কথার মধ্যে অনেক অসঙ্গতিরয়েছে। বিবৃত ঘটনাটির মধ্যেও বেশ কিছু তথ্যগত ফাঁক রয়েছে। যার কোনও উত্তর তারা দিতে পারেনি। তাই তাদের সব কথা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না তদন্তকারীদের।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, ঝুন্নু কী করতেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোলামের সঙ্গে তাঁরপুরনো কিছু ব্যবসায়িক বিবাদ ছিল বলে জেনেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে কোনও টাকারভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েও ছিল মতবিরোধ। এ সব দিকও খতিয়ে দেখার কাজ চলছে।