যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। ছবি: সংগৃহীত।
যাদবপুরের ঘটনার পর কোনও কোনও ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। অনেকে আবার শহরের বাইরে গিয়েছেন। তাঁরা কারা? কেনই বা হস্টেল ছেড়ে দিলেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। যাঁরা বুধবারের পর থেকে হস্টেল ছেড়েছেন, তাঁদের সম্বন্ধে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ছাত্রমৃত্যুর সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ আছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তা-ও।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে র্যাগিংয়ের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সম্প্রতি, নদিয়ার ছাত্রের মৃত্যুর পর সেই অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। র্যাগিংয়ের কারণেই ছাত্রটির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর একে একে হস্টেলের নানা অব্যবস্থার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগ, হস্টেলের বেশিরভাগ ঘরই প্রাক্তনীদের দখলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও তাঁরা ঘর ছাড়েন না। হস্টেলে তাঁদেরই দাপট চলে। সিসি ক্যামেরা না থাকায় অবাধে চলে বেআইনি কাজ। নতুন ছাত্রেরা হস্টেলে এলে অন্য ছাত্রের অতিথি হিসাবে তাঁদের থাকতে হয়।
এই সমস্ত অভিযোগের পর যাদবপুরের হস্টেলে থাকতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। হতে পারে, সেই কারণেই কেউ কেউ বিতর্ক এড়াতে হস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তবে তাঁরা প্রত্যেকেই তদন্তকারীদের আতশকাচের নীচে। যাদবপুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশন (ইউজিসি)-এর প্রতিনিধি দল আসবে আগামী বুধবার।
ছাত্রমৃত্যুর পর হস্টেলে ওই ছাত্রের ঘর থেকে একটি হলুদ রঙের ডায়েরি পাওয়া গিয়েছে। তাতে বিভাগীয় সিনিয়রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিন অফ স্টুডেন্টস’কে লেখা একটি চিঠিও ছিল। যাকে ঘিরে নতুন রহস্য দানা বেঁধেছে। চিঠিতে এক ছাত্রের নাম করে তিনি প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে ‘ভয় দেখানোর’ চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়। চিঠিতে তারিখ হিসাবে ছিল ছাত্রমৃত্যুর পরের দিন অর্থাৎ, বৃহস্পতিবারের কথা।
ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত যে তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাঁরাই কি এই চিঠি লিখিয়েছিলেন? পুলিশের সন্দেহের তালিকায় আরও কয়েক জন রয়েছেন। চিঠি লেখা বা লেখানোর নেপথ্যে তাঁদেরও হাত থাকতে পারে। তদন্তের মাধ্যমে সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল রবিবারই জানিয়েছিলেন, এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। শীঘ্রই সব রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
অন্য দিকে, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শুরু হয়েছে। কালো পতাকা নিয়ে ওই মিছিলে অংশ নিয়েছেন ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীদের একাংশ।
(পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী রবিবার তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টে যাদবপুরের মৃত ছাত্রের নাম না-লিখতে অনুরোধ করেছেন। এই মৃত্যুমামলা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর যৌন নির্যাতন বিরোধী ‘পকসো’ আইনে হওয়া উচিত বলেও তাঁর অভিমত। কমিশনের উপদেষ্টার অনুরোধ মেনে এর পর আনন্দবাজার অনলাইন মৃত ছাত্রের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে।)