হাওড়ায় ব্যবসায়ী খুনের তদন্তে পুলিশ। (ইনসেটে) ধৃত বিশাল দুবে। —নিজস্ব চিত্র
হাওড়ায় বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে ঠিক কী কারণে কলকাতার পরিবহণ ব্যবসায়ী আশিস সিংহ খুন হলেন সেই ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। তবে তদন্তকারীরা এক প্রকার নিশ্চিত যে ধৃত কবিতা দুবের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ওই ব্যবসায়ীর। পুলিশি জেরায় সে কথা স্বীকারও করেছেন কবিতা। দু’জনের ঘনিষ্ঠতার প্রেক্ষিতে কোনও ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েছিলেন কি না ওই ব্যবসায়ী, তা খতিয়ে দেখতে দু’জনের ফোনের কললিস্ট এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও পরীক্ষা করছে পুলিশ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হওয়া বান্ধবী কবিতার হাওড়ার জেলিয়াপাড়ার বাড়িতে গিয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ খুন হন আশিস। কবিতার প্রতিবেশীরা জানান, আশিস আসার পরেই কবিতার ঘর থেকে ঝগড়া ও মারামারির আওয়াজ আসতে থাকে। সেই ঘরে তখন আশিস ও কবিতা ছাড়াও ছিলেন কবিতার বড় ছেলে বিশাল। বাবার ফোন পেয়ে কলকাতার হাইড রোড থেকে জেলিয়াপাড়ার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন আশিসের দুই ছেলে। হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে মৃত ঘোষণা করা হয় আশিসকে। এর পরেই ব্যবসায়ীর পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তারই ভিত্তিতে হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবিতা ও তাঁর ছেলে বিশালকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার তাঁদের হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
প্রাথমিক জেরায় পুলিশকে কবিতা জানিয়েছেন, আশিস তাঁকে ভালবাসতেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনও রকম শারীরিক সম্পর্ক ছিল না। তদন্তকারীদের দাবি, আশিসের পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, কবিতাই বরং আশিসকে বার বার ফোন করে ডাকতেন। পরিস্থিতি এমনই হয়েছিল যে আশিস বাধ্য হয়ে কয়েক বার মোবাইলের সিম বদলে ফেলেন। এমনকি তাঁদের পরিবারের বিষয় থেকে কবিতাকে দূরে থাকার অনুরোধ জানাতে আশিসের স্ত্রীও জেলিয়াপাড়ায় কবিতার বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন।
এ দিকে আশিসের সই করা পাঁচ লাইনের চিরকুট উদ্ধার ঘিরে নতুন করে জট পেকেছে। প্রতিবেশীদের মধ্যে থেকেই কেউ ওই চিরকুট পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ২৬ জুনের তারিখ লেখা ওই চিরকুটে রয়েছে, কবিতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি নিজেকে শেষ করে দিচ্ছেন। তাঁর মৃত্যুর জন্য কবিতাই দায়ী। তবে পুলিশ ওই চিরকুটের বিষয়ে কিছু জানত না। এমনকি ওই পরিবহণ ব্যবসায়ীর পরিবারের তরফেও জানানো হয়, ওই চিরকুট সম্পর্কে তারা কিছু জানে না। প্রতিবেশীরা ওই চিরকুট কোথা থেকে পেলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তের মোড় ঘোরাতে কেউ এ কাজ করছেন কি না পাশাপাশি তা-ও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।