—প্রতীকী চিত্র।
বারুইপুরের উত্তরভাগে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত মাতাজি-সহ আশ্রমের আরও চার আবাসিককে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে জনরোষের মুখ থেকে তাঁদের উদ্ধার করে গ্রেফতার করে পুলিশ। এঁরা প্রত্যেকেই মারধরের ঘটনায় যুক্ত বলে অনুমান পুলিশের।
গত সোমবার উত্তরভাগের দমদমা এলাকার একটি আশ্রমে পবিত্র সর্দার নামে বছর পনেরোর ওই কিশোরকে ঠাকুরের গয়না চুরির অভিযোগে বেঁধে মারধর করা হয়। পরে মৃত্যু হয় তার। বৃহস্পতিবার ওই কিশোরের মা মালতী সর্দার আশ্রমের মাতাজি-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে ছেলেকে পিটিয়ে মারার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আশ্রমের মধ্যে ওই কিশোরকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, এ কথা জানাজানি হতেই ওই দিন সকাল থেকে দফায় দফায় আশ্রমের সামনে বিক্ষোভ দেখান এলাকার লোকজন। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত আশ্রমের গেট বন্ধ ছিল। সন্ধ্যার পরে গেট ভেঙে আশ্রমে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
রাতের দিকে কিশোরের দেহ এসে পৌঁছয় ওই এলাকায়। তখন জনরোষ আরও বাড়ে। মাতাজিকে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো মানুষ। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন তাঁরা। বারুইপুর ও ক্যানিং থানার বিশাল বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বাইরে বিক্ষোভ চলাকালীন আশ্রমের একটি ঘরে বন্দি ছিলেন মাতাজি-সহ অন্য আবাসিকেরা। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
কিশোরের মৃত্যুর পরে আশ্রমের তরফে পুলিশকে জানানো হয়, চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ায় এলাকার লোকজন তাকে মারধর করে। এমনকি কিশোরের এক মামা ওই আশ্রমে কাজ করতেন। তিনিও কিশোরকে মারধর করেন বলে দাবি করা হয়। মাতাজিও ওই দিন দাবি করেন, কিশোরের মামাই তাকে মেরেছে। তবে গ্রামবাসীরা অনেকেই জানান, কিশোরকে মারধর করে আশ্রমের লোকজনই। এমনকি, মাতাজিকেও মারধর করতে দেখা গিয়েছে বলে দাবি অনেকেরই।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পবিত্রর মামা কমল সর্দার আশ্রমেই থাকেন। সম্প্রতি আশ্রমের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছেন তিনি। কিন্তু পরবর্তী কালে কমলের বিরুদ্ধেও চুরির অভিযোগ ওঠে। তখন তিনি গ্রেফতার হন। পরে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। কিশোর-মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে কমল পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তাঁর স্ত্রী তথা আশ্রমের আবাসিক ওই মহিলাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
কে এই মাতাজি? তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, তিনি আদতে বর্ধমান জেলার বাসিন্দা। ২০১২ সাল নাগাদ উত্তরভাগের ওই এলাকায় বিঘে তিনেক জমি কিনে আশ্রম তৈরি করে বসেন। আশ্রমে বসে মাতাজি জ্যোতিষচর্চা করতেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, মাতাজির আসল নাম শম্পা ঘোষ। তবে তিনি নাম বদলে অঙ্কিতা চক্রবর্তী নাম নিয়ে আশ্রমে জ্যোতিষচর্চা শুরু করেন। বাইরে থেকে হাত দেখাতে তাঁর কাছে অনেকেই আসতেন। তবে গ্রামের মানুষ প্রায় কেউই তাঁর কাছে যেতেন না। আশ্রমে কী হত, সে ব্যাপারে এলাকার লোকের তেমন ধারণাও ছিল না। তবে আশ্রমের তরফে মাঝেমধ্যে এলাকায় সেবামূলক কাজকর্ম হত। স্থানীয় মানুষ জানান, নানা উপায়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ‘হাতে’ রেখেছিলেন মাতাজি।
পুলিশ জানিয়েছে, আশ্রমের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কী ভাবে ঘটনা ঘটল, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীদের তিন জনকেও আটক করেছে পুলিশ। পাশাপাশি কমল সর্দারের খোঁজ চলছে।