Law Violation

ছাদের আসরে শব্দতাণ্ডব রুখতে গিয়ে ‘আক্রান্ত’ পুলিশ, ধৃত দুই

বক্স বাজানো বন্ধ করতে বলায় পুলিশকে মারধর, এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে ছাদের ঘরে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে এন্টালি থানা এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৩
Share:

আনন্দ পালিত রোডে ফ্ল্যাটবাড়ির এই ছাদেই রাতে বক্স বাজানো বন্ধ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। রবিবার সকালে তখনও ছাদে পড়ে বড় বড় বক্স। —নিজস্ব চিত্র।

মধ্যরাত পেরিয়েও বহুতলের ছাদে তারস্বরে বক্স বাজিয়ে চলছিল জন্মদিনের অনুষ্ঠান। অভিযোগ পেয়ে সেই শব্দতাণ্ডব বন্ধ করতে গিয়ে ‘আক্রান্ত’ হল পুলিশ। বক্স
বাজানো বন্ধ করতে বলায় পুলিশকে মারধর, এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে ছাদের ঘরে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে এন্টালি থানা এলাকায়। তদন্তে
নেমে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম বাপি সরকার এবং প্রভাত সরকার। ধৃতদের রবিবার শিয়ালদহ আদালতে তোলে হলে বিচারক তাঁদের ১৮ তারিখ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই রাতে এন্টালি থানার আনন্দ পালিত রোডে পাঁচতলা একটি ভবনের ছাদে বসেছিল জন্মদিনের আসর। জন্মদিন উপলক্ষে ফ্ল্যাটের ছাদে বিশাল বিশাল বক্স তুলে, রীতিমতো মণ্ডপ বেঁধে বাইরের শিল্পীদের এনে জলসার আয়োজন করা হয়। অভিযোগ, সন্ধ্যা থেকেই সেখানে তারস্বরে বক্স বাজিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পুলিশ সূত্রের খবর, মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেও ওই জলসার শব্দতাণ্ডব না থামায় ১০০ ডায়ালে
ফোন করে অভিযোগ জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। লালবাজারের তরফে এন্টালি থানাকে বিষয়টি জানানো হয়।

এর পরে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আনন্দ পালিত রোডের ওই ভবনে যান এন্টালি থানার এক জন সার্জেন্ট ও এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার। সেই সময়ে ছাদে কয়েক জন মত্ত অবস্থায় বক্স বাজিয়ে নাচানাচি করছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সেখানে এসে প্রথমে বক্স বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তা শুনেই পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান কয়েক জন। আরও
ঘণ্টাখানেক বক্স বাজিয়ে অনুষ্ঠান চলবে বলে দাবি করতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু কর্তব্যরত পুলিশকর্মী ফের বক্স বাজানো বন্ধ করার কথা বললে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। শুধু তা-ই নয়, ওই পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারকে ছাদেই আটকে রেখে, ঘিরে ধরে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এ দিকে গোটা ঘটনার খবর পেয়ে এন্টালি থানার আরও পুলিশবাহিনী গিয়ে ওই সার্জেন্ট ও সিভিক ভলান্টিয়ারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পাশাপাশি, ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। রাতেই গ্রেফতার করা হয় ওই দু’জনকে। তাঁরা মত্ত অবস্থায় ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

Advertisement

জানা গিয়েছে, ধৃত বাপির ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে জলসার আয়োজন হয়েছিল। মাস দুয়েক আগে পরিবার নিয়ে ওই বহুতলের ফ্ল্যাটে এসেছেন অভিযুক্ত বাপি। জন্মদিন উপলক্ষে ফ্ল্যাটের অন্যান্য আবাসিকদের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনেরাও আমন্ত্রিত ছিলেন। সেখানে বক্স বাজিয়ে নাচগান ও দেদার মদ্যপানের আয়োজন ছিল বলে অভিযোগ। এ দিন সকালে ওই বহুতলের ছাদে গিয়ে দেখা গেল, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে বক্স, খাবার, মদের বোতল। খোলা হয়নি বেলুনের গেটও। ওই ফ্ল্যাটের এক আবাসিক জানান, কয়েক মাস হল ফ্ল্যাটটি তৈরি হয়েছে। কয়েকটি পরিবার সেখানে এসে বসবাস শুরু করলেও এখনও বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট ফাঁকা রয়েছে। ফলে এখনও ওই আবাসনের কোনও কমিটি তৈরি হয়নি। এক আবাসিকের কথায়, ‘‘আমরা রাত ৯টা নাগাদ উপরে গিয়েছিলাম। সপরিবারে খেয়ে নেমে চলে আসি। রাতে দেখি পুলিশ এসেছে।’’ তবে মধ্যরাত পেরিয়েও বক্স বাজিয়ে জলসা চলার কথা স্বীকার করে নেন ওই আবাসিক। এ দিকে, ছাদে এই ধরনের অনুষ্ঠানের কোনও অনুমতি ছিল না বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘গোটা ঘটনায় আরও কয়েক জন জড়িত। তাঁদের খোঁজ চলছে।’’

যদিও শহরে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ এই প্রথম নয়। যানশাসনে রাস্তায় দাঁড়ানো পুলিশের উপরে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে একাধিক বার। মাস দুয়েক আগে নিউ মার্কেট থানা এলাকায় চাঁদার জুলুম আটকাতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছিল পুলিশকে। সেই ঘটনায় ওসি-সহ পাঁচ পুলিশকর্মীকে মারধর করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তার রেশ না কাটতেই নতুন বছরে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শব্দতাণ্ডব থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement