সিএমআরআই

‘তুঘলকি’ নিয়ে পুলিশি রিপোর্ট সাত মাস আগেই

রোগীর ছেলে দেখলেন, তাঁর বাবার চিকিৎসার চূড়ান্ত বিলে ওষু‌ধ বাবদ অতিরিক্ত ৯৯ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। হাসপাতালের বিলিং বিভাগে গেলে সেখানকার কর্মীরা কোনও কথা না শুনেই ওই যুবককে বেরিয়ে যেতে বলেন। এই নিয়ে দু’পক্ষে বচসা বাধে। শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফের হিসেব কষে দেখলেন, ওই ৯৯ হাজার টাকা বিলে সত্যিই বাড়তি ধরা হয়েছিল।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫১
Share:

ভাঙচুরের পরে। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

ঘটনা ১। রোগীর ছেলে দেখলেন, তাঁর বাবার চিকিৎসার চূড়ান্ত বিলে ওষু‌ধ বাবদ অতিরিক্ত ৯৯ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। হাসপাতালের বিলিং বিভাগে গেলে সেখানকার কর্মীরা কোনও কথা না শুনেই ওই যুবককে বেরিয়ে যেতে বলেন। এই নিয়ে দু’পক্ষে বচসা বাধে। শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফের হিসেব কষে দেখলেন, ওই ৯৯ হাজার টাকা বিলে সত্যিই বাড়তি ধরা হয়েছিল।

Advertisement

ঘটনা ২। পুড়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল দু’বছরের এক শিশুকন্যা। পরে সে মারা যায়। ডেথ সার্টিফিকেট কেন দেওয়া যাবে না, সেটা তার বাড়ির লোকজনকে বোঝাতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উল্টে তাঁরা মৃত শিশুটির পরিজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তার পরেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয় দু’পক্ষে।

ঘটনা ৩। পথ-দুর্ঘটনায় জখম দু‌ই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। গুরুতর জখম অন্য জন তখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাফ বলে দেন, অগ্রিম টাকা জমা না দিলে রোগী ভর্তি করা যাবে না। শেষমেশ স্থানীয় কয়েক জনের মধ্যস্থতায় ওই রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

সব ক’টি অভিযোগের তিরেই সিএমআরআই। এ হাসপাতালে গত বুধবার এক কিশোরীর মৃত্যুকে ঘিরে চলেছিল তাণ্ডব, ভাঙচুর। চিকিৎসায় গাফিলতির পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিল করার অভিযোগও তুলেছিলেন রোগিণীর পরিজনেরা। এমনকী, গোলমালের সময়ে পরিজনেরা কিশোরীর দেহ না নিতে চাইলে হাসপাতালের কয়েক জন কর্মী তা রাস্তায় ফেলে দেওয়ার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ কিশোরীর বাবার।

এই সিএমআরআই হাসপাতাল নিয়েই সাত মাস আগে, গত বছরের জুলাইয়ে সতর্কতামূলক রিপোর্ট পেয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন তদানীন্তন ডিসি (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মা। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে হাসপাতালের অতিরিক্ত বিল, কর্মীদের একাংশের দুর্ব্যবহারের বিভিন্ন নজির তুলে ধরা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ওখানে যে সব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে, বেশির ভাগেরই পিছনে মূলত দু’টি কারণ। প্রথমত, রোগীর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের দুর্ব্যবহার এবং দ্বিতীয়ত, বিলে অতিরিক্ত টাকার অঙ্ক নিয়ে অভিযোগ। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পেশাদারিত্বের সঙ্গে রোগীদের উপযুক্ত পরিষেবা দিলে এবং রোগীর পরিজনেদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক ও সহানুভূতিসম্পন্ন ব্যবহার করলে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।’

সিএমআরআই-কাণ্ডের জেরে আগামী বুধবার টাউন হলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির কর্তাদের বৈঠকে ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওঠা অতিরিক্ত বিল ও পরিষেবার নানা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হবে।

যদিও ওই হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, রোগীর বাড়ির লোকদের সঙ্গে কর্মীদের একাংশের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ মিথ্যে। অতিরিক্ত বিলের অভিযোগও ঠিক নয়। বিলে অনেক সময়েই ছাড় দেওয়া হয় এবং বহু ক্ষেত্রে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা তাঁরা করেন বলেও সিএমআরআই হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে।

কিন্তু সিএমআরআই হাসপাতাল নিয়ে পুলি‌শ রিপোর্ট জমা দিতে গেল কেন? পুলিশ সূত্রে খবর, ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লালবাজারে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, স্থানীয় দুষ্কৃতীরা মাঝেমধ্যেই হাসপাতালের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গোলমাল করছে। কিন্তু স্থানীয় থানার পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তার পরেই লালবাজারের উপরতলা থেকে সাউথ ডিভিশনের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়।

রিপোর্টে অবশ্য পুলিশ দাবি করে, স্থানীয় থানার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

যদিও বুধবার তাণ্ডবের ঘটনাতেও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তারই অভিযোগ উঠেছে। একপ্রস্ত ভাঙচুর পুলিশের সামনেই হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। তা ছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে কর্মীদের মারধর ও ভাঙচুরের নেতৃত্ব দিতে যাকে দেখা যাচ্ছে, সেই মহম্মদ শাকিলকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। শাকিলের সঙ্গে ওই দিন হামলার অগ্রভাগে মূলত ছিল তার দুই সঙ্গী, ওয়াহাব ও শাহবাজ। তারাও ধরা পড়েনি। তদন্তকারীদের দাবি, ‘‘এলাকার বহু জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। ওদের খোঁজ মেলেনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement