প্রতীকী ছবি।
তৃতীয় ঢেউয়ের পরোয়া নেই। সংক্রমণ খানিকটা কমতেই করোনা-বিধি উড়িয়ে সপ্তাহ শেষের রাতে ‘পার্টি’ করার প্রবণতা বাড়ছে শহরে। সেই সঙ্গেই নৈশ কার্ফুকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরের বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তরাঁয় চলছে দেদার হইহুল্লোড়। মধ্য রাত পর্যন্ত বিভিন্ন দোকানপাট যেমন খোলা থাকছে, তেমনই আবার কোথাও কোথাও কাফের আড়ালে চলছে হুকা বার। রাতের শহরে গাড়ি বা মোটরবাইক নিয়ে ‘জয় রাইড’-এর ঘটনাও সামনে আসছে একের পর এক। যদিও পুলিশের দাবি, ইতিমধ্যেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ট্র্যাফিক গার্ডগুলির তরফেও রাতের শহরে বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোলে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশের দাবি।
দিন কয়েক আগেই পার্ক স্ট্রিটের এক অভিজাত হোটেলে মধ্য রাতে হইহুল্লোড়ের ঘটনা সামনে আসে। ৩৭ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। কিন্তু সেই ঘটনার পরেও সপ্তাহ শেষের হইহুল্লোড় বা প্রমোদভ্রমণে যে লাগাম পরানো যায়নি, তার প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায়। এর পাশাপাশি, সরকারি নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরের একাধিক রেস্তরাঁ ও পানশালা গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকছে বলেও অভিযোগ। কোথাও কোথাও মূল ফটক বন্ধ হয়ে গেলেও পিছনের দরজা দিয়ে চলছে বিকিকিনি। পার্ক স্ট্রিট, ধর্মতলা, শ্যামবাজার, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট ও তপসিয়া-সহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক পানশালা ও রেস্তরাঁ অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকছে বলে অভিযোগ।
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বলবৎ থাকছে নৈশ কার্ফু। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাতের শহরে বিনা কারণে বাইরে বেরোনোর প্রবণতায় রাশ টানা যায়নি। ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে নৈশ কার্ফু অমান্য করে বাইরে বেরোনোর অভিযোগে ৮৩০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র পার্ক স্ট্রিট এলাকাতেই ১০০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। রবিবার রাতেও একই ভাবে অভিযান চালানো হয়। ওই দিন ১০০৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেই ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই প্রমোদভ্রমণ অথবা ‘পার্টি’ করে ফিরছিলেন বলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। রবিবার রাতে পার্ক স্ট্রিটে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়া অনিমেষ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘করোনা একটু কমায় এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলাম।’’ কার্ফুর কথা তাঁর জানা ছিল না বলে দাবি ওই যুবকের।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই রাতে মাথায় লাল-নীল ফ্ল্যাশার লাগানো একটি গাড়িকে আটক করা হয়েছিল পার্ক স্ট্রিট ও লাউডন স্ট্রিটের সংযোগস্থলে। মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে জানা যায়, গাড়িতে ওই আলো লাগানোর অধিকারী তিনি নন। এর পরেই পুলিশ আলো খুলে নিয়ে মালিককে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়।
এ দিকে, তপসিয়াতেও রাতের অন্ধকারে কাফের আড়ালে হুকা বার চালানোর ঘটনা সামনে এসেছে রবিবার। এক জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম আলতামাস আজম (২৬)। বেশ কিছু দিন ধরেই পূর্ব তপসিয়া রোডের ওই কাফেতে রাত পর্যন্ত ভিড় দেখা যাচ্ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত তিন মাস ধরে ওই কাফের আড়ালে চলছিল হুকা বারের ব্যবসা। রাত হলেই সেখানে ভিড় জমাতেন কমবয়সিরা।
শহরের একাধিক জায়গাতেই ঘটছে সরকারি বিধিভঙ্গের ঘটনা। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বললেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কার্ফুর বিধি বলবৎ করতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাতের শহরেও নজরদারি বেড়েছে। ডিভিশনগুলিকেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’