প্রতীকী ছবি।
রাজারহাটের পাথরঘাটা পঞ্চায়েতের একটি গ্রামে এক মহিলার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্যের সমাধান হল বলে দাবি করল পুলিশ। তার কিছু ক্ষণ পরেই পঞ্চাশোর্ধ্বা ওই মহিলাকে খুনের অভিযোগে নুর মহম্মদ শেখ ওরফে বিশু নামে এক নির্মাণ শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যদিও ওই মহিলাকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় কে বা কারা বাঁশবাগানে ফেলে গেল, তাঁর গায়ে ছেঁকা দিল কে, মহিলার মাথায় কী দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, এটি ধর্ষণ করে খুন কি না— এই সব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর এখনও বিধাননগর কমিশনারেটের তরফে মেলেনি। পুলিশ শুধু জানিয়েছে, মহিলার উপরে অত্যাচার করেছিল অভিযুক্ত। ধৃত শ্রমিকের বাড়ি মুর্শিদাবাদে। সে মূক ও বধির। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় দোষ স্বীকার করেছে সে। তাঁদের আরও দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে ওই এলাকার আরও দুই মহিলার সঙ্গে একই ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছিল নুর।
গত বুধবার বিকেলে রাজারহাটের পাথরঘাটা পঞ্চায়েতের একটি গ্রামের বাঁশবাগান থেকে ওই মহিলার অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার হয়। সে দিন সকালে মহিলা খেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বিকেল হয়ে গেলেও না ফেরায় তাঁর খোঁজ শুরু করেন পরিজনেরা। শেষে বাঁশবাগান থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। গ্রামবাসীদের সন্দেহ, মহিলাকে ধর্ষণের পরে খুন করে বাঁশবাগানে ফেলে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
সূত্রের খবর, নিউ টাউন লাগোয়া ওই গ্রাম ও সেটির আশপাশের রাস্তায় সিসি ক্যামেরা না থাকায় অভিযুক্তকে খুঁজতে প্রাথমিক ভাবে সমস্যায় পড়ে পুলিশ। প্রায় ১০০ জনের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। শেষ পর্যন্ত সাহায্য নেওয়া হয় স্কেচ ম্যাপের। অভিযুক্তের খোঁজে রাজারহাট ও নিউ টাউনের বিভিন্ন নির্মাণস্থলে গিয়ে সেখানকার শ্রমিকদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন রাজারহাট ও টেকনো সিটি থানার পুলিশকর্মীরা। ঘটনার দিন কোনও শ্রমিক তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়েছিলেন কি না, ঘটনার পরে কোনও শ্রমিক বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন কি না— এমন একাধিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গ্রামের মানুষ জানাচ্ছেন, ওই মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে তাঁদের অনেকের সঙ্গেও কথা বলেন পুলিশের পদস্থ আধিকারিকেরা। কাজে লাগানো হয় বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগকেও। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ ভাবেই এক শ্রমিকের হদিস মেলে। গ্রামের এক বাসিন্দা পুলিশকে জানান, ওই শ্রমিকের মুখ তাঁদের অচেনা। এর পরেই ওই ব্যক্তির স্কেচ আঁকান তদন্তকারীরা। ছবি ধরে ফের হয় তল্লাশি।
শেষ পর্যন্ত খোঁজ মেলে মূক ও বধির ওই শ্রমিকের। পুলিশ সূত্রের খবর, গ্রামেরই একটি নির্মাণস্থলে কর্মরত ছিল সে। গ্রামবাসীদের বর্ণনার সঙ্গে মুখের ছবি মিলে যাওয়ায় রবিবার সকালে প্রথমে ওই শ্রমিককে আটক করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মূক-বধিরদের নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় অভিযুক্ত ঘটনার কথা স্বীকার করার পরে দুপুরে তাকে গ্রেফতার করে রাজারহাট থানা।