রবীন্দ্র সরোবর। —ফাইল চিত্র।
ছটপুজোর দূষণ থেকে শহরের দুই সরোবরকে রক্ষা করার পরীক্ষায় পুরোপুরি উত্তীর্ণ পুলিশ-প্রশাসন!
এক দিকে রবীন্দ্র সরোবর এবং অন্য দিকে সুভাষ সরোবর পর্যবেক্ষণ করার পরে বৃহস্পতিবার এ কথাই বলেছেন পরিবেশকর্মীরা। ছট উপলক্ষে পুণ্যার্থীরা যাতে কোনও ভাবেই শহরের ওই দুই সরোবরে প্রবেশ করতে না পারেন, তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন। বুধবার বিকেল থেকে ছটপুজো শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে তা শেষ হয়। এ দিন ওই দুই সরোবর চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, পুণ্যার্থীরা ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারেননি। তাঁদের আটকাতে পুলিশি পাহারা এতটাই কঠোর ছিল যে, দু’দিন ধরে প্রাতর্ভ্রমণকারীরাও দুই সরোবরে ঢুকতে পারেননি।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ রবীন্দ্র সরোবরে পৌঁছে দেখা গেল, প্রতিটি গেটই বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা। সামনে পাহারায় পুলিশকর্মীরা। বেলা আরও বাড়তে তাঁদের ধীরে ধীরে সরিয়ে নেওয়া হয়। সাত নম্বর গেটের সামনে দাঁড়ানো এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার বললেন, ‘‘অন্যান্য বছর দেখেছি, সরোবর আটকানো থাকলেও পুণ্যার্থীরা কেউ কেউ ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে এ বছর কেউ সরোবরের ধারেকাছেও আসেননি।’’ এক স্থানীয়ের কথায়, ‘‘বছর দুয়েক আগেও ছটপুজোয় সরোবরে ঢুকতে যে তাণ্ডব চলেছিল, তা ভুলব না। এ বার নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকায় কেউ আসেননি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, এ রকম কড়াকড়ি যেন প্রতি বছর থাকে। একমাত্র তা হলেই এই সরোবর দূষণের হাত থেকে বাঁচবে।’’
এ দিন সুভাষ সরোবরে গিয়ে দেখা গেল, সেখানেও জলাশয়ের চারপাশ টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মূল পাঁচটি গেটের সামনে বাঁশের ব্যারিকেড। বেলা হতে সেই ব্যারিকেড খুলে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। সেখানকার এক নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘‘এ বার কড়াকড়ি ছিল বলে রেহাই মিলল। না-হলে সরোবরের জল নোংরায় ভরে থাকত। অতীতে ছটপুজোর জেরে জল এতটাই দূষিত হয়েছিল যে, প্রচুর মাছ মরেছিল।’’ আর এক নিরাপত্তারক্ষী বলছিলেন, ‘‘সরোবরে ঢুকে পুণ্যার্থীরা জলে শুধু পুজোর সামগ্রীই ফেলতেন না, কেউ কেউ যত্রতত্র মল-মূত্রও ত্যাগ করতেন। সরোবর পুরো নরক হয়ে থাকত। ফি-বছর এ রকম কড়াকড়ি থাকলে ওই ভয়াবহ দূষণটা হবে না।’’
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বুধবার দুই সরোবর ঘোরার পরে বলেছিলেন, বৃহস্পতিবারেই বোঝা যাবে, প্রশাসন কতটা সফল। এ দিন দুপুরে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন যে তৎপরতায় শহরের দুই সরোবরে ছটপুজোর পুণ্যার্থীদের প্রবেশ আটকেছে, তা সত্যিই তারিফযোগ্য। সরোবর রক্ষায় এ বছরের মতো প্রশাসনিক প্রয়াস যেন প্রতি বছর বজায় থাকে।’’
ওই দুই সরোবরের দায়িত্বপ্রাপ্ত, কেএমডিএ-র সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার দিলীপকুমার বড়াল বললেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে ছটপুজোয় সরোবরে পুণ্যার্থীদের প্রবেশ আটকাতে এক মাস ধরে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছি। পথনাটিকা থেকে শুরু করে অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিলি করা হয়েছে। এর ফলে মানুষও সচেতন হয়েছেন। তাঁদের অশেষ ধন্যবাদ।’’