ব্রিগেডে নরেন্দ্র মোদীর সমাবেশ চায় বিজেপি।
নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ের প্রচারে বেশ কয়েকবারই রাজ্যে আসার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। আগেই এমনটা জানিয়েছিল রাজ্য বিজেপি। সব পরিকল্পনা মতো চললে নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে মোদীর অভিযান শুরু হতে পারে ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের গোড়াতেই। এবং সেটা হবে ব্রিগেড সমাবেশ দিয়ে। এমনটাই পরিকল্পনা এবং চাহিদা রাজ্য বিজেপি-র। আগামী রবিবার হলদিয়ায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন মোদী। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের জন্য রাজ্যে ‘আদর্শ আচরণবিধি’ চালুর আগে তিনি রাজনৈতিক সফরে আসবেন না। সেটা মাথায় রেখেই দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি র্বিগেড সমাবেশ করছে কংগ্রেস-বাম জোট। এখন দেখার, রাজ্য বিজেপি-র চাহিদা মতো মোদী ব্রিগেডে আসতে সম্মত হন কি না। হলেও ওই সমাবেশ বাম-কংগ্রেসের আগে হয় না পরে।
তবে ব্রিগেড সমাবেশের আগেই রাজ্যের পাঁচটি এলাকা থেকে শুরু হবে বিজেপি-র ‘পরিবর্তন যাত্রা’। রাজ্য বিজেপি চাইছে, সেই যাত্রার সূচনায় ৬ ফেব্রুয়ারি বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা এবং ৮ ফেব্রুয়ারি অমিত শাহ বাংলায় আসুন। দু’জনেই রাজ্যে থাকুন দু’দিন করে। ইতিমধ্যেই মোদী-শাহ-নড্ডার কাছে সময় চেয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। তবে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়া নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সম্মতি ও অন্যান্য কর্মসূচির উপরে। সোমবার প্রশ্ন করা হলে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ যেমন বলেছেন, ‘‘আমাদের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অনেক চাহিদাও আছে। কিন্তু দিনক্ষণ এখনই চূড়ান্ত করে কিছু বলা যাবে না।’’
রাজ্য বিজেপি আগেই ঠিক করেছিল, বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ‘ঝড় তুলতে’ রথযাত্রা করা হবে। গত ১৬ জানুয়ারি দিল্লিতে অমিতের বাড়িতে রাজ্য নেতাদের উপস্থিতিতে তা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। এর পর ১৭ জানুয়ারি কলকাতায় বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্ব ওই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার আবার দিল্লিতে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে অমিতের বৈঠকে বসার কথা। তার আগে সোমবার হেস্টিংসে বিজেপি-র রাজ্য নির্বাচনী কার্যালয়েও রথযাত্রা নিয়ে বৈঠক হয়। বিজেপি সূত্রে খবর, প্রথম রথটির সূচনা হবে ৬ ফেব্রুয়ারি নবদ্বীপে। সেখানে থাকবেন নড্ডা। এ ছাড়াও ৮ ফেব্রুয়ারি কোচবিহার ও কাকদ্বীপ থেকে রথের সূচনা হবে। পরের দিন ৯ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রাম ও তারাপীঠ থেকে শুরু হবে আরও দু’টি রথ।
মোদী-শাহ-নড্ডা তিন জনকেই ‘পরিবর্তন যাত্রা’-য় চায় রাজ্য বিজেপি। ফাইল চিত্র
রাজ্য বিজেপি-তে পাঁচটি সাংগঠনিক জোন রয়েছে। উত্তরবঙ্গ, রাঢ়বঙ্গ, নবদ্বীপ, মেদিনীপুর এবং কলকাতা। প্রাথমিক পরিকল্পনায় ঠিক হয়েছে, প্রতিটি জোনে একটি করে রথযাত্রা করা হবে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কলকাতা জোনের রথযাত্রায়। সেটি মোদীর প্রস্তাবিত ব্রিগেড সমাবেশ ভরানোর লক্ষ্যে। রাজ্য বিজেপি নেতারা চাইছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে সেই রথের সূচনায় থাকুন অমিত। সোমবার ‘পরিবর্তন যাত্রা’-র প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদকরা ছাড়াও হাজির ছিলেন তিন কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিব প্রকাশ এবং অরবিন্দ মেনন। সূত্রের খবর, বৈঠকে ঠিক হয়েছে রথযাত্রা পরিচালনায় বড় ভূমিকা থাকবে দলের যুবমোর্চার। এর জন্য যুবমোর্চার সহ-সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাকে রাজ্যের বিভিন্ন শহরে যুবদের নিয়ে মিছিল ও কলকাতায় একটি সমাবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা জোনের রথকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কারণে সোমবারের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
গত ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারি অমিতের রাজ্যে আসার কথা থাকলেও দিল্লিতে বিস্ফোরণের জন্য তা শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়। সেই সফরে ঠাকুরনগরে সমাবেশ করে মতুয়া সম্প্রদায়ের সামনে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করা নিয়ে কেন্দ্রের পরিকল্পনার কথা খোলসা করার কথা ছিল অমিতের। ৩০ জানুয়ারি ঠাকুরনগরে যেতে না পারলেও অমিত কথা দেন, খুব তাড়াতাড়ি তিনি সেখানে যাবেন। ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সফরে এলে তিনি ঠাকুরনগর যেতে পারেন। অমিতের সফর হতে পারে উত্তরবঙ্গেও।
কলকাতা ও নবদ্বীপ জোনের রথের সূচনায় শাহ এবং নড্ডাকে চাইলেও (বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছেন, শেষপর্যন্ত তাঁদের চাহিদা পূরণ হবে) বাকি তিনটির ক্ষেত্রে এখনও পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি বলেই খবর। তবে সব জায়গাতেই কোনও কেন্দ্রীয় নেতা বা মন্ত্রী থাকবেন। প্রাথমিক ভাবে এমনও ভাবা হয়েছে যে, পাঁচটি রথের শেষে সমাবেশ হবে ব্রিগেডে। প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গ সফরের দিন চূড়ান্ত হলেই সেই কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হবে। বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য এখনই রথযাত্রার পরিকল্পনা নিয়ে বিশদে কিছু বলতে চাইছেন না। কারণ, অতীতে রাজ্যে রথযাত্রা করতে গিয়ে ধাক্কা খেতে হয়েছিল গেরুয়া বাহিনীকে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও রথযাত্রার পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯-এর ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ নামে রথযাত্রার পরিকল্পনা থাকলেও তা শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায়। প্রথমত, রথযাত্রায় রাজ্য প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি। পরে আদালতের নির্দেশেও রথের যাত্রাভঙ্গ হয়। এ বার যাতে কোনও বাধা না আসে, তার জন্য শুরু থেকেই মেপে পা ফেলতে চাইছে বিজেপি-র বঙ্গ ব্রিগেড। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রথযাত্রার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে পদ্ম শিবির।