mamata banerjee

মমতার ‘পথ’ ধরেই ভোট-সন্ধানী বিজেপি, নির্মলার রাস্তা-ঘোষণায় কটাক্ষ তৃণমূলের

সংসদে বাজেট পেশের সময় পশ্চিমবঙ্গে ৬৭৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির প্রকল্প ঘোষণার পর থেকেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:৪৭
Share:

গত অক্টোবরেই ‘পথশ্রী অভিযান’ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নীলবাড়ির পথ মসৃণ করতেই নির্মলা সীতারমণের বাজেটে বাংলায় রাস্তা নির্মাণে জোর? সংসদে বাজেট পেশের সময় পশ্চিমবঙ্গে ৬৭৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির প্রকল্প ঘোষণার পর থেকেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে এমন কথাও উঠছে, মমতার পথ ধরেই নির্বাচন জয়ের পথ-সন্ধানী বিজেপি।

Advertisement

এমন প্রশ্ন ওঠার পিছনে কারণও রয়েছে। প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার রাজ্যে সড়ক নির্মাণে খুব বেশি জোর দিয়েছিল। ২০১৬ সালে ক্ষমতায় ফেরার ক্ষেত্রে সেই পথ তৃণমূলকে বড় ডিভিডেন্ড দিয়েছিল বলেও মনে করেন অনেকেই। ২০২১-এর নির্বাচনের আগে গত অক্টোবরেও ‘পথশ্রী অভিযান’ নামে এক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এর পরে কেন্দ্রের বাজেটে বাংলার রাস্তা নির্মাণে গুরুত্বকে মমতার নকল দেখছে তৃণমূল। সোমবার এই প্রসঙ্গে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা যে নকল তা একেবারেই পরিষ্কার। কিন্তু মনে রাখতে হবে নকল করে পাশ করা যায়, কিন্তু ফার্স্ট হওয়া যায় না।’’ সুব্রতর এই বক্তব্যকে হাস্যকর বলে মনে করছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হাস্যকর কথা। উনি হতাশার থেকে বলছেন। করোনা পরিস্থিতির পরে গোটা দেশের থেকেও খারাপ অবস্থা বাংলার। জরাজীর্ণ বাংলাকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা রয়েছে বাজেটে। কাউকে নকল করার দরকার নেই কেন্দ্রের।’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পরই শহর থেকে গ্রামে বড় রাস্তা তো বটেই, পাড়ায় পাড়ায় ছোট রাস্তা থেকে গলি ঢালাইয়ের কাজ হয় রাজ্য জুড়ে। মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান (মনরেগা) প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমেও সড়ক পরিকাঠামো তৈরি হবে বলে ঘোষণা করেন মমতা। অনেকেই মনে করেন, ২০১৬-তে নবান্ন দখলের পথ অনেকটাই মসৃণ করে দেয় গাঁ-গঞ্জের ঢালাই রাস্তা। সে কথা স্বীকার করে সোমবার সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাস্তা মানুষের সার্বিক উন্নয়নের কাজ করে। শুধু স্থানীয় ভোটারদেরই নয়, বাইরে থেকে যাঁরা আসেন তাঁরাও এর সুখ্যাতি করেন। ধরা যাক, কেউ বাঁকুড়ায় গিয়ে ভাল রাস্তা দেখলেন। তিনি কিন্তু কলকাতায় এসেও তার প্রশংসা করবেন।’’ এর পাল্টা শমীক বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার যেটুকু যা রাস্তা বানিয়েছে তার বেশিটাই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায়। আর সেই রাস্তা বানাতে গিয়ে যে পরিমাণ কাটমানি দিতে হয়েছে তার জন্য বেহাল রাস্তাই গোটা বাংলার ছবি।’’

Advertisement

২০২১-এর নির্বাচনের আগেও সেই ‘সড়ক’ পথ বেছেছেন মমতা। গত ১ অক্টোবর তিনি ‘পথশ্রী অভিযান’ নামে প্রকল্পে রাজ্যে মোট ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা মেরামত হবে বলে ঘোষণা করেন। এর জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ৭ হাজার রাস্তা চিহ্নিত করা হয়েছে বলে টুইটারেও লেখেন তিনি। ওই দিনই নবান্নের তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাম আমল ও তৃণমূল জমানায় রাজ্যে সড়ক নির্মাণ কতটা গুরুত্ব পেয়েছে তার একটি তুলনামূলক হিসেব প্রকাশ করা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী, বামফ্রন্ট আমলে রাজ্যে ৯২ হাজার ২৩ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছিল। আর পশ্চিমবঙ্গে এখন (১ অক্টোবর, ২০২০ পর্যন্ত) রাস্তার মোট দৈর্ঘ ৩ লক্ষ ১৬ হাজার ৭৩০ কিলোমিটার।

সোমবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজ্যের জন্য সড়ক প্রকল্পের ঘোষণা নিয়ে সুব্রত-র আরও দাবি, ‘‘এখন ঘোষণা করে কোনও লাভ হবে না। এই প্রকল্পের রাস্তা যখন তৈরি হবে তখন রাজ্যে নির্বাচন হয়ে যাবে। পুরনো পথ ধরেই ক্ষমতায় আসব আমরা।’’ তবে বিজেপি-র দাবি, কেন্দ্রের বাজেট আদৌ রাজ্যের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে নয়। দলের রাজ্য নেতা শিশির বাজোরিয়া বলেন, ‘‘বিজেপি ভোট সর্বস্ব দল নয়। এটা জাতীয় বাজেট। তা কোনও ভোটকে লক্ষ্য করে হয় না। রাজ্যকে আগে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য রাস্তা আর রেল খুবই জরুরি। সেটাই রাজ্যকে দিয়েছেন নির্মলাজি। এটাকে লঘু দৃষ্টি দিয়ে দেখা ঠিক নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement