আজ ভার্চুয়াল মাধ্যমেই নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর মেট্রোপথের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাহাগঞ্জ সংলগ্ন ডানলপ মাঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা ছিল। সেই সভা থেকেই মেট্রো এবং রাজ্যের আরও চারটি রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।
ভোটের আগে নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর মেট্রোপথের উদ্বোধনের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে কেন্দ্র। বরাহনগর ও বি টি রোড সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধা ছাড়াও উত্তর এবং দক্ষিণের দুই কালীতীর্থের সংযুক্তির বিষয়টি এতে প্রচারে বাড়তি গুরুত্ব পাবে।
উত্তরের দক্ষিণেশ্বরের সঙ্গে মেট্রোপথের মাধ্যমে দক্ষিণের কালীঘাট জুড়ে যাওয়ার ফলে ভক্ত, তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের বিশেষ সুবিধা হবে বলে মনে করছেন রেলের কর্তারা।
আজ উদ্বোধন হলেও এই পথে মেট্রো চলাচল শুরু করবে আগামিকাল অর্থাত্ মঙ্গলবার থেকে। দক্ষিণেশ্বর স্টেশন সংলগ্ন পরিসর খুব সঙ্কীর্ণ। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এর ভার্চুয়াল উদ্বোধন হল।
শহরের মেট্রোপথে নতুন স্টেশন জুড়লেও এর সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ ভাড়ায় কোনও বদল হচ্ছে না। ফলে কবি সুভাষ থেকে মাত্র ২৫ টাকাতেই পৌঁছনো যাবে দক্ষিণেশ্বরে!
দক্ষিণেশ্বর থেকে বরাহনগর যেতে লাগবে ৫ টাকা ভাড়া। পরের স্টেশন অর্থাৎ, নোয়াপা়ড়া যেতে খরচ করতে হবে ১০ টাকা। দমদম এবং বেলগাছিয়ায় যাওয়া যাবে ১৫ টাকায়। এর পর দক্ষিণেশ্বর থেকে যতীন দাস পার্ক পর্যন্ত সব স্টেশনের জন্য ২০ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে। অন্য দিকে, দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত ভাড়া ২৫ টাকা।
কলকাতা মেট্রো সূত্রে খবর, সারা দিনে সবক’টি ট্রেন দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত চলবে না। এই মুহূর্তে কবি সুভাষ এবং দমদমের মধ্যে সারাদিনে ২৪৪টি ট্রেন চলে। তার মধ্যে ১৫৮টি ট্রেন কবি সুভাষ এবং দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে চালানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের।
নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত নতুন এই মেট্রোপথ ৪.১ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নতুন প্রকল্পের কাজ হয়েছে। তবে প্রকল্পের শুরুতে যাত্রাপথ ততটা মসৃণ ছিল না। বরাহনগরের কাছে জমিজটের কারণে দীর্ঘদিন এই প্রকল্প আটকে ছিল।
কলকাতা মেট্রোর নবতম স্টেশন হিসেবে সংযোজিত হতে চলা বরাহনগর এবং দক্ষিণেশ্বরের নামের ফলকে বাংলা ভাষাকে ব্রাত্য করার অভিযোগ উঠেছিল।
সেই সংবাদ সামনে আসার পরে বিতর্ক দানা বাঁধে। এর পরই ফলক বদল করেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। নতুন বসানো ফলকে যথাক্রমে বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজিতে স্টেশনের নাম সমান মাপের হরফে লেখা হয়েছে।
দক্ষিণেশ্বর মেট্রো নিয়ে রবিবার বাংলাতে টুইটও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, বরাহনগর ও দক্ষিণেশ্বরের নবনির্মিত স্টেশন দু’টিতে অনেক অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধা রয়েছে। যা ‘সহজ জীবনযাত্রা’র জন্য আরও সহায়ক হবে। এই স্টেশনগুলিতে রয়েছে দৃষ্টিনান্দনিকতার ছোঁয়া’।
করোনা পরিস্থিতিতে চলতি বছরে যাত্রী ভাড়া খাতে মেট্রোর আয় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে বলে অনুমান মেট্রো কর্তাদের। তাই যাত্রী ভাড়ার বাইরে আয় বাড়াতে স্টেশন চত্বরের খালি জায়গা বাণিজ্যিক সংস্থাকে সাময়িক ভাবে স্বল্প সময়ের জন্য ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন মেট্রোর আধিকারিকেরা।
স্টেশন চত্বরে যে সমস্ত দোকান থাকবে তাদের কর্মীদের করোনা-বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র দেখানোর পরেই তাঁদের স্টেশনে ঢোকার অনুমতি মিলবে।
রাত ৮টার মধ্যে সমস্ত দোকান বন্ধ করতে হবে। ভবিষ্যতে বিশেষ উৎসব-অনুষ্ঠান বা সামাজিক আবহকে এ ভাবেই ব্যবহার করতে চান মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত মেট্রো কোন কোন সময়ে পাওয়া যাবে তার চূড়ান্ত সময়সূচি এখনও জানা যায়নি।