—প্রতীকী চিত্র।
অভিযোগ দায়েরের পর দু’দিন পেরিয়েছে। কিন্তু পর্ণশ্রী থানায় গিয়ে বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করা সেই নাবালিকার শারীরিক পরীক্ষা এখনও হল না। আদালতে তার গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়নি বলে সূত্রের খবর। পুলিশ আপাতত আগামী মঙ্গলবার বিশেষ পকসো (দ্য প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আদালতে মামলাটি উঠলে পরবর্তী পদক্ষেপ করার ভাবনাচিন্তা করছে বলে জানা গিয়েছে। সরকারি হোমে থাকা ওই নাবালিকা ও তার বোনের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি তাদের মাকে।
গত বৃহস্পতিবার পর্ণশ্রী থানায় গিয়ে বছর তেরোর এক নাবালিকা তার বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশকর্মী ওই বাবাকে এর পরে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়। আপাতত ২ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে আছেন ধৃত ব্যক্তি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর সময়ে মেয়েটির মা বাড়ি ছেড়ে তাঁর বাবা-মায়ের কাছে চলে যান। এর পর থেকে বাবার সঙ্গেই থাকে অভিযোগকারিণী ও তার সাত বছরের বোন। পুলিশের কাছে নাবালিকার দাবি, মায়ের অনুপস্থিতিতে গত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে একাধিক বার তাকে ধর্ষণ করেছেন বাবা। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। সেই কারণে সংসারে নিত্য অশান্তি লেগে থাকত। এই কারণেই দুই মেয়েকে রেখে বাবা-মায়ের কাছে চলে যান তাঁর স্ত্রী। এর পরেই নিয়ম মেনে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি দুই নাবালিকাকে হোমে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
নাবালিকার মা শনিবার বলেন, ‘‘কিছুতেই আমার সঙ্গে মেয়েদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। দেখা হলে বুঝিয়ে কথা বলতে পারতাম। কেন বাবার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করল, সেটাও জানতে পারতাম।’’
সমাজকল্যাণ দফতরের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি) সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকেন, এমন ক্ষেত্রে তাঁদের নাবালক বা নাবালিকা সন্তানের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের হলে কোনও পক্ষকেই সাধারণত দেখা করতে দেওয়া হয় না। সিডব্লিউসি-র এক কর্মী বললেন, ‘‘এমন সব ক্ষেত্রে আগে গোপন জবানবন্দি এবং শারীরিক পরীক্ষা হওয়ার দিকে জোর দেওয়া হয়। বাবা হোন বা মা, যে কোনও পক্ষ বাচ্চাকে কিছু বোঝাতে পারে। তখন বাচ্চার মতামত প্রভাবিত হওয়ার প্রসঙ্গ উঠতে পারে। এই কারণেই বিশেষ পকসো আদালতে আপাতত মামলাটি ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হচ্ছে।’’ সিডব্লিউসি-র দায়িত্বপ্রাপ্তেরা জানিয়ে দিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে আদালত যদি অভিযোগকারিণী এবং তার বোনকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে বলে এবং দুই নাবালিকা যেতে রাজি থাকে, তা হলে অবশ্যই তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটাও গোপন জবানবন্দি বা শারীরিক পরীক্ষা হওয়ার আগে নয়।
শারীরিক পরীক্ষা এখনও হল না কেন? তদন্তে যুক্ত এক পুলিশকর্মী জানান, এ ক্ষেত্রে আদালতের দিন পাওয়ার চেষ্টা চলছে। নাবালিকা শারীরিক পরীক্ষা করাতে কতটা রাজি, সেটাও দেখতে হয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে কাউকে দিয়েই জোর করে কিছু করানো যায় না।
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বাবা-মা আলাদা থাকেন এমন বহু মামলায় দেখা গিয়েছে, কোনও একটি পক্ষ মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। অনেক ক্ষেত্রে এ-ও দেখা যায়, বাবা বা মায়ের পক্ষ থেকে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। ফলে গোপন জবানবন্দি হওয়ার আগে কারও সঙ্গেই অভিযোগকারিণী এবং তার বোনকে দেখা না করতে দেওয়াই ভাল। বরং মামলার গুরুত্ব বুঝে পুলিশকে দ্রুত শারীরিক পরীক্ষা ও গোপন জবানবন্দি নেওয়ার দিন ঠিক করতে হবে।’’