পেট্রোপণ্যের দাম বাড়েছে লাগামছাড়া ভাবে। ফাইল চিত্র।
পেট্রল, ডিজ়েলের দাম বাড়ছে নিয়মিত। এ দিকে, কলকাতা পুরসভার আর্থিক মন্দাও সহজে ঘুচবার নয়। তাই এ বার গাড়ির ব্যবহারে রাশ টেনে জ্বালানির খাতে সাশ্রয় করতে চাইছেন পুর কর্তৃপক্ষ। বাড়তি খরচ বাঁচাতে আগেই কর্মীদের ফোন বিল, বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের উপরে বিধিনিষেধ জারি করেছিল পুরসভা।
মেয়রের নির্দেশে তাঁর অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি (ওএসডি)-র তরফে সম্প্রতি পুরসভার সব দফতরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গাড়ির ব্যবহারে কাটছাঁট করতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পেট্রল-ডিজ়েলের ব্যবহারে পুর কমিশনারের নির্দেশ অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। অভিযোগ করা হয়েছে, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে অনেকেই জ্বালানি ব্যবহার করছেন। পুরসভার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রল, ডিজ়েলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে বলা হয়েছে।
পুরসভার আর্থিক সঙ্কট খতিয়ে দেখতে আগেই একটি কমিটি গড়া হয়েছে। সাত সদস্যের ওই কমিটির শীর্ষে রয়েছেন বিশেষ পুর কমিশনার (সাধারণ ও উন্নয়ন) তাপস চৌধুরী। সূত্রের খবর, ওই কমিটিই গাড়ি ও জ্বালানি ব্যবহারে নজরদারি চালাবে।
পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, ম্যানেজার, এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এবং তার উপরের পদমর্যাদার আধিকারিকেরা গাড়ি পান। এ জন্য তাঁরা প্রতিদিন ৬ লিটার পেট্রল বা ৫ লিটার ডিজ়েল পেয়ে থাকেন। পুরসভায় গাড়ির জোগান দেয় যে সব সংস্থা, তারা দৈনিক পেট্রল গাড়িপিছু ৩৬০ টাকা এবং ডিজ়েল গাড়িপিছু ৪২০ টাকা ভাড়া পায়। এ ছাড়াও ময়লা সাফাই করতে জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের গাড়ির জন্য জ্বালানি খাতে রোজ কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়।
পুর অর্থ দফতরের আধিকারিকেরা় জানাচ্ছেন, বহু ক্ষেত্রে গাড়ির জ্বালানি বাবদ নিয়ম বহির্ভূত ভাবে খরচ হয়। ওই দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ম্যানেজার বা এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের অধস্তন কর্মীরা গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি পান না। অথচ বিভাগের নামে অনেক ডেপুটি ম্যানেজারও গাড়ি ব্যবহার করেন। আবার রোজ ৬ লিটার পেট্রল বা ৫ লিটার ডিজ়েল ব্যবহার না হলেও অনেকে সেই পরিমাণ তেল বিক্রি করে দেন।’’ পুর আধিকারিকদের একাংশের আবার যুক্তি, কাজের তাগিদে শহর ঘুরতে কখনও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জ্বালানি লাগে। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা কে দেবে?’’
শহরের ময়লা ধাপায় ফেলতে দৈনিক প্রচুর গাড়ি ব্যবহৃত হয়। অতীতে এই ধরনের গাড়ির জ্বালানি ব্যবহারে একাধিক বার কারচুপি ধরা পড়েছিল। পুর অর্থ দফতরের এক আধিকারিকও বলছেন, ‘‘জঞ্জাল অপসারণের গাড়িতে জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে আগেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এখনও তা রয়েছে। সেগুলি নিয়মিত খোঁজ করলে অনেক কারচুপি বেরোবে।’’ ওই গাড়িগুলির জ্বালানি বাবদ খরচে নজর রাখা হচ্ছে। পুরসভা জানাচ্ছে, অহেতুক খরচ কমাতে আরও কঠোর নিয়ম চালু হতে চলেছে।