kali Puja 2022

সবুজ বাজিতে কোর্টের ছাড়ে জুজু দেখছেন পোষ্যের অভিভাবকেরা

কালীপুজো এলেই পোষ্যদের ঘিরে নানা আতঙ্ক ফিরে আসে। কেউ সর্বক্ষণ পোষ্যকে জড়িয়ে বসে থাকেন। কেউ দরজা-জানলা বন্ধ করে জোরে বক্স চালিয়ে বাজির শব্দ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২ ০৭:১৭
Share:

ভুক্তভোগী: সচেতনতার মিছিলে এক পোষ্য। বৃহস্পতিবার, নিউ টাউনে। নিজস্ব চিত্র।

বাজির শব্দ যত বেড়েছে, ততই অস্থির হয়ে পড়েছে সে। কাপড় দিয়ে মাথা-কান-গলা পেঁচিয়েও লাভ হয়নি। ৪৮ দিনের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই ছুটে আলমারির নীচে ঢুকতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। পেটে আঘাত লাগায় অজ্ঞান হয়ে যায় সে। পরদিন বোঝা যায়, বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আওয়াজের ভয় এবং সন্তান হারানোর শোক এমন চেপে বসেছিল যে, দ্রুত পেট পরিষ্কার করানো যায়নি। দিন দশেক খাওয়া, মল-মূত্র ত্যাগ বন্ধ ছিল। সব সময়ে চোখ দিয়ে জল গড়াত। মাসখানেক পরে পায়োমেট্রা রোগ হয় তার। বাঁচিয়ে রাখা যায়নি গিরিশ পার্কের দত্ত বাড়ির সেই আদরের পোষ্য মলিকে।

Advertisement

কালীপুজো এলেই পোষ্যদের ঘিরে এমনই নানা আতঙ্ক ফিরে আসে। কেউ সর্বক্ষণ পোষ্যকে জড়িয়ে বসে থাকেন। কেউ দরজা-জানলা বন্ধ করে জোরে বক্স চালিয়ে বাজির শব্দ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ ঘুমের ওষুধ দিয়ে কিছুটা ভাল রাখার চেষ্টা করলেও পরে নিরুপায় হয়ে চিকিৎসককে ফোন করেন। তার পরে থানায়। সুরাহা মেলে না। করোনার কারণে গত দু’বছর সব রকম বাজির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল হাই কোর্ট। অন্যান্য বারের চেয়ে কম হলেও আদালতের নির্দেশে কিন্তু কলকাতা একেবারে বাজিমুক্ত হয়নি। তবুও পোষ্যদের সাময়িক যন্ত্রণামুক্তি ঘটেছিল। এ বার কালীপুজোয় সন্ধ্যা ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবুজ বাজি ফাটানোয় ছাড় থাকায় পুরনো আতঙ্ক ফিরে আসতে পারে, মনে করছেন পোষ্যের অভিভাবকেরা।

এক পোষ্যের অভিভাবক যাদবপুরের সুমনা দাস বললেন, ‘‘রাস্তার অনেক কুকুরই বাজির ভয়ে পাড়াছাড়া হয়। কুকুরের কাছে নিজের এলাকা বড় ব্যাপার। পরে কামড় খেয়ে বা গাড়ির ধাক্কায় মৃতপ্রায় হয়ে ফেরে।’’ তাঁর মতে, ‘‘মাত্রাতিরিক্ত শব্দবাজি ফাটানো প্রতিবারই নিষিদ্ধ থাকে। কাজ হয় না। এ বারেও হবে কি না, পুলিশের উপরেই নির্ভর করছে।’’ একই দাবি সল্টলেকের দেবলীনা সরকারের। তাঁর কথায়, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা প্রাণী হলে বাজির আওয়াজের প্রভাব পড়ে সন্তানের উপরেও। যে বাচ্চা জন্মায়, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম হয়।’’ কসবার বাসিন্দা তমোঘ্ন ঘোষের দাবি, ‘‘কুকুর মানুষের চেয়ে কয়েক গুণ জোরে শোনে। বেড়াল কুকুরের চেয়েও জোরে শোনে। আমার বেড়াল বছর তিনেক আগে এই বাজির জন্যই কালীপুজোর রাতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে।’’

Advertisement

পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বাড়িতে হৃদ্‌রোগী বা অসুস্থ-বয়স্ক থাকলে যেমন বাজি ফাটানো বা জোরে মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করি, এ ক্ষেত্রেও তেমনই করতে হবে। বলতে হবে, বাড়িতে পোষ্য রয়েছে। দরকারে বার বার বলতে হবে।’’ তাঁর পরামর্শ, আওয়াজ থেকে বাঁচতে যদি পোষ্য বাড়িতে আশ্রয় খোঁজে, তাকে সেখানে থাকতে দিতে হবে। ওই নির্দিষ্ট জায়গায় জল রাখতে হবে, হালকা খাবার খাওয়াতে হবে। বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে কিছুটা জোরে গান চালিয়ে বাজির শব্দ আটকানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। শ্বাসকষ্ট বা অন্য সমস্যায় দ্রুত পশু চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

‘পশ্চিমবঙ্গ ভেটেরিনারি কাউন্সিল’-এর সভাপতি জওহরলাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে পশু হাসপাতালগুলিকে বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক যাতে থাকেন, তা দেখার পাশাপাশি একটি হেল্পলাইন নম্বর চালুরও চেষ্টা চলছে।’’ সচেতনতা প্রচারে তৎপর পুলিশও। বিধাননগর কমিশনারেটের উদ্যোগে বৃহস্পতিবারই নিউ টাউনে একটি মিছিল হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement