হিমাংশু শেখর এবং জাহ্নবী সাউ।
রাজ্য জয়েন্ট তাঁদের কাছে প্র্যাক্টিস ম্যাচের মতো। অ্যাডভান্সড জয়েন্টকেই পাখির চোখ করে প্রস্তুতি নিয়েছেন ওঁরা। জয়েন্টের মেধা তালিকার প্রথম দশে থাকা কলকাতা এবং হাওড়ার ছয় পরীক্ষার্থী জানিয়ে দিলেন, রাজ্য জয়েন্টের এই ফল অ্যাডভান্সড জয়েন্টে আরও ভাল করার জন্য তাঁদের উৎসাহ জোগাবে। কারণ, তাঁদের লক্ষ্যই হল আইআইটি খড়্গপুর, কানপুর, দিল্লি অথবা মুম্বইয়ে পড়াশোনা করা।
তবে আইআইটি থেকে পাশ করে চাকরি নয়, শিল্পোদ্যোগী হতে চান জয়েন্টে রাজ্যে প্রথম, ব্যারাকপুর সেন্ট্রাল মডেল স্কুল রিভারসাইডের ছাত্র হিমাংশু শেখর। বালির দেওয়ান গাজি রোডের বাসিন্দা ওই তরুণের কথায়, ‘‘বিল গেটস, শচীন বনশল আমার অনুপ্রেরণা। তাই দিল্লি, মুম্বই বা কানপুর আইআইটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করে কিছু করতে চাই। যাতে অনেকের উপকার হয়।’’ বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন হিমাংশু। টিভিতে নিজের সাফল্যের কথা জানতে পারেন ওই তরুণ। বললেন, ‘‘আশা ছিল এক থেকে পাঁচের মধ্যে থাকব। তবে পরীক্ষার পরে মনে হচ্ছিল, প্রথম স্থানে থাকতেও পারি।’’ দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন হিমাংশু। অবসর সময়ে দেখতেন বিজ্ঞানভিত্তিক সিনেমা। একাদশ ও দ্বাদশের জন্য আলাদা টিউশন নেননি তিনি। জয়েন্টের লক্ষ্যেই রাজস্থানের একটি কোচিং সেন্টারে টিউশন নিতেন। হিমাংশুর বাবা হাওড়ার স্টেশন মাস্টার, মা গৃহবধূ এবং ছোট ভাই নবম শ্রেণির পড়ুয়া।
আইআইটি খড়্গপুরে কম্পিউটার বা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চান রাজ্য জয়েন্টে তৃতীয় হওয়া ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের ছাত্র সপ্তর্ষি মুখোপাধ্যায়। কলকাতার এনএসসি বসু রোডের বাসিন্দা সপ্তর্ষি জানান, আইসিএসই-তে ৯৯.২ শতাংশ পেয়েছিলেন তিনি। সপ্তর্ষির কথায়, পরীক্ষার ফল সামান্য খারাপ হওয়ায় মন খারাপ করলে মা-বাবাই উদ্বুদ্ধ করতেন। ভালবাসেন আত্মজীবনীমূলক বই পড়তে। মা সোমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছেলেকে পড়াশোনার জন্য কোনও দিন বলতে হয়নি। খুব মন দিয়ে পড়ত।’’
মেধা তালিকার চতুর্থ, সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুলের ছাত্রী জাহ্নবী সাউ জানালেন, তিনিও আইআইটি খড়্গপুর থেকে কম্পিউটার অথবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চান। মেধা তালিকার প্রথম দশ জনকে মুখ্যমন্ত্রী শুভেচ্ছাপত্র পাঠিয়েছেন। সেই চিঠি পেয়ে খুব খুশি জাহ্নবী। তিনি জানান, যে রকম পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তাতে আশা ছিল প্রথম দশে থাকার।
রাজ্য জয়েন্টে অষ্টম বাগবাজারের বাসিন্দা অগ্নিধ্র দে-ও সাউথ পয়েন্টের ছাত্র। অগ্নিধ্রর মা-বাবা চিকিৎসক। তবে তাঁর ভাল লাগে অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা। তাই ইঞ্জিনিয়ার হতে চান তিনি। অগ্নিধ্র জানান, মা-বাবা কোনও দিন তাঁকে জোর করে কিছু চাপাননি।
হাওড়ার দানেশ শেখ লেনের বাসিন্দা ক্যালকাটা বয়েজ়ের ছাত্র অয়ন অধিকারী জয়েন্টে নবম হয়েছেন। আইসিএসই-তে ৯৭.৪ শতাংশ নম্বর পাওয়া অয়নের পরামর্শ, বার বার ঘরে বসে ঘড়ি দেখে পরীক্ষা দিতে হবে। কী ভুল হয়েছে, তা খুঁটিয়ে দেখতে হবে। রাজ্য জয়েন্ট যে ভাবে হয়, হুবহু সে ভাবেই বাড়িতে বসে একাধিক বার পরীক্ষা দিতেন অয়ন। এতে তাঁর পরীক্ষা-ভীতি কেটে গিয়েছিল। তবে পড়ার সময়ে মা সামনে থাকলে পড়ায় বেশি মন বসে, জানালেন অয়ন।
মেধা তালিকায় শুধু প্রথম স্থানাধিকারীই নন, দশমও ব্যারাকপুর সেন্ট্রাল মডেল স্কুলেরই এক ছাত্র। দশম স্থানাধিকারী শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগে যাদবপুরে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে যাবেন। অ্যাডভান্সড জয়েন্টে ভাল ফল করলে আইআইটি খড়্গপুরে পড়তে চান তিনিও।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।