সব থেকে বেশি বেপরোয়া হতে দেখা গিয়েছে বাইক আরোহীদের। ছবি: পিটিআই।
মোটরবাইক চালকের পিছনে বসেছেন দু’জন। সকলেরই কেতাদুরস্ত পোশাক। কিন্তু মাথায় হেলমেটের বালাই নেই। পিছনে বসা এক জন মোবাইল ধরেছেন চালকের কানে। তিনি বাইক চালাতে চালাতেই চিৎকার করে বলছেন, ‘‘বলছি তো, দশ মিনিটে আসছি।’’ চিৎকার থামতেই আরও বেশি বেপরোয়া গতিতে ছুটল বাইক।
শনিবার, বছর শেষের রাতে ইএম বাইপাসে দেখা গেল এই বিপজ্জনক দৃশ্য। শুধু ওই রাস্তাই নয়, সারা শহরেই দেখা গেল এমন বেপরোয়া বাইক আরোহীদের। বড়দিনের মতো এ দিনও ট্র্যাফিক-বিধি ভাঙলেন অসংখ্য মানুষ। মুখে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও, বহু ক্ষেত্রেই পুলিশকে দেখা গেল, কঠোর হওয়ার বদলে দেখেশুনে সমঝে চলতে। বছর শেষের উৎসবে আপনারা এত ‘নরম’ কেন? প্রশ্ন শুনে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের কেউ বললেন, ‘‘বেশির ভাগই এলাকার ছেলে! কী আর বলব?’’ আর এক জনের উত্তর, ‘‘সবই ক্যামেরায় উঠছে। মোবাইলে মেসেজ চলে যাবে।’’ পুলিশের এ হেন মনোভাব দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, উৎসবের শহরে এত ‘নরম’ পুলিশ দিয়ে বেপরোয়া চালকদের আটকানো যাবে তো? পুলিশকর্তাদের একাংশের যদিও দাবি, পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তাঁরা জানান, শুক্রবার রাতে ৫৮ জন মত্ত চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লালবাজার অবশ্য বর্ষবরণের রাতে শহরের ৯৭টি জায়গায় অতিরিক্ত নজরদারির ব্যবস্থা করেছিল। পার্ক স্ট্রিট এবং সংলগ্ন এলাকার জন্য ছিল আলাদা ব্যবস্থা। বর্ষবরণের রাতের জন্য শুধুমাত্র পার্ক স্ট্রিট এলাকা ছ’টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। ওই এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশকর্তারা। এত পুলিশ নামা সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রেই নজরদারির ফাঁক গলে দেদার বিধি ভাঙা হয়েছে। কোথাও কোথাও বিধি ভাঙতে দেখেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ। যা দেখে আরও বেপরোয়া হয়েছে পথে নামা অবাধ্য জনতার একাংশ।
সব থেকে বেশি বেপরোয়া হতে দেখা গিয়েছে বাইক আরোহীদের। কোথাও একাধিক জনকে পিছনে বসিয়ে, কোথাও আবার সিগন্যাল না মেনে গতির তুফান তুলে ছুটতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। দিনে পরিস্থিতি তবু কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে বেপরোয়া চালকদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। সেই সঙ্গে ছিল মত্ত গাড়িচালকদের দাপটও। সন্ধ্যার পর থেকেই গাড়ির ভিতরে জোরে গান চালিয়ে হুল্লোড় করতে দেখা যায় অনেককে। সন্ধ্যায় হাইল্যান্ড পার্কের কাছে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘এঁদের থামাবে কে? এক দিন আগেই বেপরোয়া বাইক থামিয়ে এলাকার ছেলেদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল পুলিশকেই। বাইপাসে অনেক ক্যামেরা আছে। যা হওয়ার এতেই হবে।’’
পুলিশের এই ‘গা বাঁচানো’ মনোভাব দেখে বিরক্ত অনেকেই। তাঁদের মতে, এর ফলে নিয়ম ভাঙার প্রবণতা আরও বেড়েছে। যদিও লালবাজারের এক ট্র্যাফিক-কর্তা বললেন, ‘‘কাউকেই কোনও ছাড় দেওয়া হয়নি। বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটতেই পারে। বর্ষশেষের উৎসবের আগে থেকেই রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ নামানো হয়েছিল। নিয়ম ভাঙা হলে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে দেদার।’’