সবুজ ফেরাতে বাড়ছে চারা উপহারের চল

যত সংখ্যক গাছ উপহার দেওয়া হচ্ছে, তার সবটাই কি শেষমেশ বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে?

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০১:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

ক্ষুদ্র সে, তুচ্ছ নয়। সে যে ভাবী বনস্পতি। যার ছায়ায়, ফুলে, ফলে, অক্সিজেনে সম্বৃদ্ধ হবে আগামী প্রজন্ম। অনেক দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত যেন এই গুরুত্বপূর্ণ সত্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছেন এই শহর তথা রাজ্যের মানুষ। তাই তো গত দু’ বছর ধরে নিমন্ত্রণ বাড়িতে কিংবা যে কোনও অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে কিংবা ‘রিটার্ন গিফ্‌ট’ এর তালিকায় স্থান হয়েছে চারাগাছের। অনুষ্ঠান বাড়ির নিমন্ত্রিতেরা কিংবা গাছ প্রাপকেরা পরম আদরে হাতে তুলে নিচ্ছেন শাল, সেগুন, কৃষ্ণচূড়ার চারা। তার পরে সেই চারা বাড়ির বাগানে রোপন করছেন। এমন কথাই জানাচ্ছেন, শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন নার্সারি মালিক।

Advertisement

তবুও প্রশ্ন, যত সংখ্যক গাছ উপহার দেওয়া হচ্ছে, তার সবটাই কি শেষমেশ বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে?

রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা মানছেন যে সবটা হচ্ছে না। পাশাপাশি তাঁরা এমনও মনে করছেন যে অন্তত একটা সচেতনতা কোথাও না কোথাও তৈরি হয়েছে। ক্ষুদ্র চারাগাছের মতো সেই সচেতনতাও এক দিন বনস্পতির আকার ধারণ করলে তা সত্যিই পৃথিবীর পক্ষে মঙ্গলজনক বলেই মনে করেন দফতের ডেপুটি ডিরেক্টর সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া। তাঁর কথায়, ‘‘এই প্রবণতা খুবই ভাল। শুভ উদ্যোগ। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও সবুজায়নের জন্য এমনটাই করা উচিত।’’ ওই দফতরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও এখন অতিথিদের হাতে স্মারকের বদলে তুলে দেওয়া হচ্ছে গাছের চারা। উদ্যানপালন দফতরের হিসেবে ২৫-৩০ শতাংশ অবশ্যই রক্ষা করছেন লোকজন।

Advertisement

স্বয়ং রাজ্যের পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও মনে করেন, ফুল বা গাছের পাতা ছিঁড়ে তৈরি উপহারের চেয়ে একটা চারাগাছের গুরুত্ব অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘‘একটা গাছের চারা উপহার হিসেবে পেয়ে সেটিকে যত্ন করে বড় করলে তাতে কিছুটা হলেও দূষণ থেকে র‌ক্ষা মিলবে। যত বেশি অতিথিকে দেওয়া যাবে তত বেশি প্রাণ বাঁচবে।’’

ভবিষ্যতে কী হবে তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে ইতিমধ্যেই ছোট চারাগাছ মঙ্গলের সূচনা করেছে গাছ বিক্রেতাদের জন্য। চারাগাছ উপহার দেওয়ার প্রবণতায় তাঁদের ব্যবসার শ্রী বৃদ্ধি ঘটেছে।

মছলন্দপুরে ২৫ বছর ধরে নার্সারি চালানো বিকাশ ঘটকের কথায়, ‘‘আগে লোকজন নিজের শখে চারাগাছ কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু শেষ কয়েক বছর ধরে অনুষ্ঠানে অতিথিদের উপহার দেওয়ার জন্য গাছের চারা সরবরাহের অর্ডার আসছে। এক অনুষ্ঠানে ১৫০০ গাছের চারা সরবরাহ করে ছিলাম।’’ হাওড়ার একটি নার্সারির মালিক জানান, কারুকার্য করা মাটির ছোট টব কিংবা ঘটে সুন্দর ভাবে গাছের চারাটি বসিয়ে উপহার দেওয়া হচ্ছে। গাছের তালিকায়, শাল, সেগুন, কৃষ্ণচূড়া, আম ছাড়াও ছোট ফুল, বাহারি পাতা থেকে শুরু করে গৃহসজ্জার গাছ—সবেরই চারা থাকছে।

২০১৮ সালে বৌভাতের অনুষ্ঠানে ৫৫০ জন অতিথিকে টগর গাছের চারা উপহার দিয়ে ছিলেন মছলন্দপুরের বাসিন্দা সঙ্গীতশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল। তাঁর কথায়, ‘‘অন্তত দেড় হাজার মানুষকে ভবিষ্যতে বিষহীন বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিতে পেরেছি। টগর গাছে ফুল ফোটার পরে অধিকাংশ অতিথিই তার ছবি তুলে আমাদের পাঠিয়েছেন।’’

‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ এর প্রচারে সম্প্রতি টালিগঞ্জ ট্র্যাফিক গার্ড রাসবিহারী মোড়ে হেলমেটহীন বাইকচালকদের কেস দেওয়ার পাশাপাশি শাল, কৃষ্ণচূড়া, দেবদারুর মতো বিভিন্ন গাছের চারা উপহার দিয়েছে। ওসি সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়ম মেনে গাড়ি চালালে যেমন দুর্ঘটনা থেকে প্রাণ বাঁচবে, তেমনই সবুজায়নের ফলেও যে প্রাণ বাঁচে তা বোঝাতেই এমন চিন্তাভাবনা।’’

এই প্রবণতাকে একটা সামাজিক বার্তা বলেই মনে করেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি নিজেও বাড়ির টবে গাছ পরিচর্যা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। অন্যান্য উপহার না দিয়ে চারাগাছ দেওয়াটা ভাল। তাতে দূষণ রোধে সবুজায়নের জন্য একটা সামাজিক সচেতনতাও তৈরি করা যায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement