‘মগজাস্ত্র’ কি খোয়া গিয়েছে, প্রশ্নে পুলিশ

রেড রোডে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় বায়ুসেনা অফিসারের মৃত্যু, গিরিশ পার্কে পুলিশ অফিসারের গুলিবিদ্ধ হওয়া ও ট্যাংরায় দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে পুলিশের আক্রান্ত হওয়া— শহরের তিন গুরুত্বপূর্ণ মামলাতেই অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে লালবাজার।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২৯
Share:

লালবাজার।—ফাইল চিত্র।

প্রাচ্যের ‘স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড’ তকমা কি তবে প্রশ্নের মুখে?

Advertisement

রেড রোডে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় বায়ুসেনা অফিসারের মৃত্যু, গিরিশ পার্কে পুলিশ অফিসারের গুলিবিদ্ধ হওয়া ও ট্যাংরায় দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে পুলিশের আক্রান্ত হওয়া— শহরের তিন গুরুত্বপূর্ণ মামলাতেই অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে লালবাজার। শুধু তা-ই নয়, তিনটি মামলাতেই অভিযুক্তদের বেশির ভাগ বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারার পিছনে তদন্তকারীদের ব্যর্থতা, না কি যাঁকে-তাঁকে অভিযুক্ত সাজিয়ে কাঠগড়ায় হাজির করা, কোনটা দায়ী?

ব্রিটিশ আমলে লন্ডন পুলিশের ধাঁচে তৈরি হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে তৈরি করা হয় ‘স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড’-এর ধাঁচে। বাঙালি গোয়েন্দাদের দক্ষতা লালবাজারকে এনে দিয়েছিল ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড’ তকমা। লালবাজারের ফাইল ঘাঁটলে বোঝা যায়, কত কঠিন রহস্যের সমাধান করেছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। সে সব নিয়ে সম্প্রতি বইও প্রকাশ করেছে কলকাতা পুলিশ। তা হলে এখন এমন দশা কেন?

Advertisement

অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাবে আচ্ছন্ন হওয়ার ফলেই এ সব মামলায় ‘ব্যর্থ’ হয়েছে কলকাতা পুলিশ। প্রসঙ্গত, তিনটি ঘটনাতেই রাজনৈতিক যোগ স্পষ্ট। রেড রোড-কাণ্ডে অভিযুক্ত সাম্বিয়া সোহরাব তবু দু’বছর জেলে ছিলেন। কিন্তু বাকি দু’টি ঘটনা একেবারেই রাজনৈতিক।

পুলিশের অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৫ সালে পুর নির্বাচনের দিন জগন্নাথ মণ্ডল নামে এক পুলিশ অফিসার গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও তৎকালীন পুলিশ কমিশনার সাংবাদিক বৈঠকে ‘এমন কিছু জানি না’ বলেছিলেন। ওই ঘটনায় মধ্য কলকাতার এক নেতার নাম উঠে এলেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি লালবাজার।

এমন ঘটনায় হতাশ প্রাক্তন পুলিশকর্তারা। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যখন দেখি, উর্দিধারী পুলিশকর্মীরা আক্রান্ত হলেও সাজা হয় না, খারাপ লাগে। তদন্তের উপরে নজরদারি ঠিকঠাক চললে রায় অন্য রকম হত।’’ রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত বলছেন, ‘‘এই মামলার রায় প্রমাণ করে, তদন্তকারী অফিসার এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের কাজে ঘাটতি ছিল। রায়ে সেই ঘাটতি প্রতিফলিত হয়েছে।’’

যদিও রাজনৈতিক ‘ঘনিষ্ঠতা’ কিংবা প্রভাবশালীদের ছাড় দেওয়া এবং তদন্তে বা নজরদারিতে ঘাটতির অভিযোগ মানতে নারাজ কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের কর্তাদের দাবি, পুলিশ অফিসারের শরীরে মেলা কার্তুজ যে মূল অভিযুক্তের বন্দুক থেকেই চালানো হয়েছিল, তার ফরেন্সিক প্রমাণ রয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ আদালতে সাক্ষ্যও দিয়েছেন। তার পরেও সাজা হল না কেন, তার উত্তর খুঁজছে লালবাজারও। এ দিন রায় ঘোষণার পরে অভিযুক্তদের আইনজীবী ফজলে আহমেদ বলেন, ‘‘রায়ে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারেনি পুলিশ।’’ রেড রোড ও গিরিশ পার্কের মামলার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাবে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের এ-ও দাবি, রাজনৈতিক প্রভাবও তদন্তে বাধা হয় না। তা যদি হত, তৃণমূল নেতা শম্ভুনাথ কাও সাজা পেতেন না। তবে এর পরেও প্রশ্ন উঠেছে, সাম্প্রতিক কালে শম্ভুনাথের মতো উদাহরণ ক’টি আছে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement