প্রতীকী ছবি।
মানুষের প্রাণ বাঁচাতে যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা যুদ্ধে নেমেছেন, তাঁদেরই রাখা হয়েছিল সেফ হোমে। কিন্তু সেই সেফ হোম নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখালেন এলাকাবাসীদের একাংশ। পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তারা গিয়ে কথা বললেও বাসিন্দারা তাঁদের অবস্থানে অনড় থাকেন। শেষমেশ সেফ হোমে রাখা ব্যক্তিদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ উঠে যায়। মঙ্গলবার, রাজারহাটের জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের যাত্রাগাছির বন্দেরমোড়ের ঘটনা।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছে, সেফ হোমের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাই রাজারহাট-নিউ টাউন সংলগ্ন জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একটি সেফ হোম তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। তার জন্য যাত্রাগাছি মোড়ের একটি হোটেলকে চিহ্নিত করা হয়। সূত্রের খবর, সেখানে করোনায় আক্রান্ত সেই সব স্বাস্থ্যকর্মীকে রাখা হচ্ছিল, যাঁরা উপসর্গহীন। মঙ্গলবার বিকেলে ওই সেফ হোম নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এলাকাবাসীরা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এর পরেই বিধাননগর পুলিশের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। পৌঁছে যান পুলিশ কমিশনার মুকেশও। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের তরফে মিশন ডিরেক্টর সৌমিত্র মোহনও ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ কমিশনার জানান, বাসিন্দাদের নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।
এই ঘটনার পরে যাত্রাগাছি এলাকায় সেফ হোম গড়ে তোলার কাজ আরও কঠিন হল বলেই মনে করছে স্থানীয় মহল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নিউ টাউন এলাকায় অন্য কোথাও সেফ হোম তৈরি করার কথা ভাব হয়েছে। এর জন্য জায়গা খোঁজার কাজও শুরু হয়েছে। এর আগেও কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি করা বা এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা নিয়ে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে রাজারহাট ও নিউ টাউনে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন বাসিন্দাদের বোঝানো যাচ্ছে না? কেন বার বার এমন ঘটনা ঘটছে? রাজারহাটের বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক— কোনও পক্ষই সাধারণ মানুষকে ঠিকমতো বোঝাতে পারেনি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আফতাবউদ্দিন জানান, এলাকাবাসীদের বোঝানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই তাঁরা কথা শুনতে চাননি। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর করের কথায়, ‘‘সকলেই যদি বলেন, তাঁদের এলাকায় সেফ হোম করা যাবে না, তা হলে আক্রান্তদের কোথায় রাখা হবে?’’ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
রাজারহাট পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরে এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলবেন তাঁরা।