প্রতীকী ছবি।
লাইসেন্স ছাড়া কোনও দোকানে অ্যাসিড রাখা বা বিক্রি করা যাবে না। আর লাইসেন্স থাকলেও কোন দোকান অ্যাসিড বিক্রি করছে, কাকে করছে— সব তথ্য রাখতে হবে স্থানীয় থানাকে। অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ রয়ে গিয়েছে খাতায় কলমে। যার ফল, নিয়ম না মেনেই দেদার বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড। এমনকি, তা পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনেও।
২০১৮ সালের ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’ (এনসিআরবি)-র রিপোর্ট বলছে, অ্যাসিড হামলায় দেশের মধ্যে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ওই বছরে রাজ্যে অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে ৫০টি। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ জন। শুধু তা-ই নয়, অ্যাসিড হামলার চেষ্টা হয়েছে আরও ১২টি ক্ষেত্রে। অর্থাৎ অ্যাসিড হামলার ঘটনা কমছে না কিছুতেই। কিন্তু কেন?
অ্যাসিড হামলার কারণ এবং আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা এ রাজ্যের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, সুপ্রিম কোর্টের রায় খাতায় কলমেই রয়ে গিয়েছে। রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন তো বটেই, জেলা পুলিশের কাছেও অ্যাসিড বিক্রির কোনও তথ্য থাকে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দোকানে যে অ্যাসিড বিক্রি হয়, সে তো ব্যবহার হয় মূলত শৌচাগার পরিষ্কারের কাজে। আর যে অ্যাসিড নিয়ে হামলা চালানো হয়, তা মিউরিয়টিক বা নাইট্রিক অ্যাসিড। যা সাধারণত ব্যবহার করা হয় সোনার দোকানে। ওই অ্যাসিড সাধারণ মানুষের হাতে যায় কী ভাবে?
আরও পড়ুন: পার্ক সার্কাসে প্রতিবাদীদের জন্য তাঁবু খাটানোর দাবি
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে দিব্যালোক রায়চৌধুরী জানালেন, গত কয়েক বছরে যে ক’টি অ্যাসিড হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, সবগুলিই মিউরিয়টিক এবং নাইট্রিক অ্যাসিড-হামলার ঘটনা। প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, হামলাকারীরা সোনার দোকান থেকে ওই অ্যাসিড সংগ্রহ করেছে। ফলে সোনার দোকানগুলির উপরে পুলিশের নিয়মিত নজরদারি দরকার। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে সব কারখানায় অ্যাসিড তৈরি হচ্ছে, সেগুলির উপরেও দরকার কড়া নজরদারি। সেখানকার উৎপাদন এবং বিক্রির হিসেব, কাদের কাছে সেই অ্যাসিড যাচ্ছে— এই সংক্রান্ত রেকর্ড থাকলে অন্তত তারা জানবে যে, পুলিশি নজরদারি রয়েছে।’’ আর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার স্বাতী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কড়া আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। অথচ পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশ এক সময়ে অ্যাসিড হামলার শীর্ষে থেকেও আজ প্রায় অ্যাসিড হামলা মুক্ত। কারণ, সেখানে অ্যাসিড ছুড়লে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি শাস্তি এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।’’
আরও পড়ুন: দেশ দু’ টুকরো হলেও পদ্মা ছিল দু’দেশের
অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে যে পুলিশি নজরদারি নেই, মানছে কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পশ্চিম, বন্দর-সহ বেশ কিছু এলাকার থানা। তাদের অধিকাংশের দাবি, এক সময়ে নজরদারি চলত। মানা হত রেজিস্টারও। ইদানীং সে সব হয় না। যদিও এসএসডি ডিভিশনের একটি থানার এক অফিসার জানান, তাঁর থানা থেকে এখনও প্রতি মাসে অ্যাসিড সংক্রান্ত তথ্য ডিভিশনাল অফিসারের কাছে পাঠানো হয়।
তবে শুধু নজরদারি বা সচেতনতা প্রচারে অ্যাসিড হামলা বন্ধ সম্ভব নয়, বলছেন আক্রান্তেরা। তাঁদের বড় অংশের দাবি, শাস্তি না হওয়ায় হামলাকারীদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে। তা দেখে অন্যেরা মনে করছে, সহজেই হামলা চালিয়ে পার পাওয়া যায়। এমনই এক আক্রান্ত, পূর্ব মেদিনীপুরের দাসপুরের পারমিতা বলেন, ‘‘যে হারে অ্যাসিড হামলার ঘটনা বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে আমরা শুধু চিৎকারই করে যাচ্ছি। হামলাকারীদের আটকানো যাচ্ছে না, প্রশাসনেরও এ ব্যাপারে কোনও সদিচ্ছা নেই।’’