প্রতীক্ষা: এ পথে কবে চলবে যাত্রিবাহী গাড়ি? ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
পোশাকি নাম সাদার্ন বাইপাস। ইএম বাইপাসের বর্ধিত এই অংশ ঢালাই ব্রিজ পেরিয়ে কামালগাজি উড়ালপুল হয়ে সোজা গিয়েছে বারুইপুর পর্যন্ত। কয়েক বছর আগে তৈরি দু’লেনের রাস্তাটি দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরবাইক চলছে দেদার। তবে যাত্রিবাহী গাড়ি চলে না এ রাস্তায়। নিত্যযাত্রীদের বড় অংশ চাইছেন, এই পথে বাস, অটোর মতো যাত্রিবাহী গাড়ি চালাতে শুরু করুক প্রশাসন।
কলকাতার সঙ্গে শহরতলির যোগাযোগ দ্রুত করতে বারুইপুরের কুলপি রোডের সমান্তরাল এই বাইপাসের কাজ শুরু হয় বাম আমলে। তৃণমূল জমানার গোড়ায় কামলাগজি থেকে বারুইপুর পর্যন্ত দুই লেনের সেই রাস্তা তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়। ২০১৬ সালে চালু হয় কামালগাজি উড়ালপুল। এর মাধ্যমে বাইপাসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয় রাস্তাটি। ফলে দ্রুত বারুইপুর বা সংলগ্ন এলাকা থেকে পুরনো বাইপাসে পৌঁছনো যায়। তবে তা নিজস্ব গাড়িতেই। যাত্রিবাহী গাড়ি না চলায়, সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দক্ষিণ শহরতলির যাত্রীরা।
নিত্যযাত্রীরা জানাচ্ছেন, বারুইপুর থেকে ইএম বাইপাসমুখী বেশ কয়েকটি বাস চলে। তবে প্রতিটিই কুলপি রোড ধরে। অর্থাৎ রাজপুর, সোনারপুর পেরিয়ে গড়িয়া হয়ে তবে বাইপাসে পৌঁছয়। দিনের ব্যস্ত সময়ে এই পথে পাটুলি পৌঁছতে ঘণ্টাখানেকের বেশি লেগে যায়। অথচ বারুইপুর থেকে যদি নতুন বাইপাস ধরা যায়, তা হলে আধ ঘণ্টার কম সময়ে পাটুলি পৌঁছনো সম্ভব। বারুইপুর বা সংলগ্ন এলাকা থেকে অনেকেই অটো-বাসে গড়িয়া বাজারে গিয়ে কবি নজরুল স্টেশন থেকে মেট্রো ধরেন। ব্যস্ত সময়ে কুলপি রোড ধরে গড়িয়া পৌঁছতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। কিন্তু নতুন বাইপাস ধরে বারুইপুর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম মেট্রো স্টেশনে পৌঁছতে সেখানে লাগবে বড়জোর মিনিট পঁচিশ। দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন জায়গা থেকে যাঁরা কর্মসূত্রে সল্টলেক বা নিউ টাউনে যান, নতুন বাইপাস ধরলে তাঁদেরও সময় বাঁচবে অনেকটা।
বারুইপুরের বাসিন্দা অনির্বাণ দাস বলেন, “বারুইপুরে নতুন বাস টার্মিনাস হল। নতুন বাসও চালু হচ্ছে শুনলাম। কিন্তু বাইপাস দিয়ে কোনও বাসই নেই! যাঁদের মোটরবাইক বা নিজের গাড়ি আছে, তাঁরাই এই পথের সুবিধা পাচ্ছেন। এত বড় রাস্তা কি শুধু ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য?” এক কলেজ পড়ুয়া অয়ন দাসের মতে, “এই পথে বারুইপুর থেকে ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত অটো বা কোনও যাত্রিবাহী গাড়ির রুট চালু হলেও অনেক সহজে মেট্রো স্টেশন পৌঁছনো যায়।’’
স্থানীয় বেসরকারি বাস সংগঠনের এক কর্তার দাবি, “বারুইপুর থেকে কামালগাজি পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তার মাঝে এখনও সে ভাবে জনবসতি গড়ে ওঠেনি। ফলে যাত্রিবাহী গাড়ি চললে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।’’ বারুইপুর-গড়িয়া অটো রুটের একাধিক চালকের বক্তব্য, “যাত্রী হলে ওই পথে চালাতে কোনও আপত্তি নেই।’’ নিত্যযাত্রীদের দাবি, ওই রাস্তায় জনবসতি অনেকটাই বেড়েছে। তা ছাড়া বারুইপুর থেকে একটা বড় অংশের মানুষ যাতায়াত করেন। ফলে যানবাহন চালু হলে যাত্রী না হওয়ার কারণ নেই। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, ওই রাস্তায় যাত্রিবাহী গাড়ি চালুর প্রস্তাব এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বাম আমলে সুজন চক্রবর্তী সাংসদ থাকাকালীনই রাস্তার কাজ শুরু হয়। তাঁর দাবি, “প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছিল। এত দিনে পুরো রাস্তা চালু হওয়া উচিত ছিল। এর গুরুত্ব সরকার বুঝতে পারছে না বলেই বাস-অটো চালু করল না।’’ এ পথে যাত্রিবাহী গাড়ি চলাচলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মানছেন বারুইপুরের (পশ্চিম) বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর আশ্বাস, “ওই পথের দু’দিকে ইদানীং জনবসতি বেড়েছে। বারুইপুর থেকে মূল রাস্তা দিয়ে আমরা নতুন বাস চালু করেছি। ভবিষ্যতে ওই পথেও চালু হবে।’’ রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার এক কাউন্সিলর বলেন, “কামালগাজি-ঢালাই ব্রিজ অটো রুট নতুন বাইপাস দিয়ে বারুইপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা চলছে।’’