Kalighater Kaku

এত বোকা কেন আপনারা! ‘কাকুর কণ্ঠ’ নিয়ে ইমেলে পরামর্শের ঢল, ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা ইডির

সুজয়কৃষ্ণ ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বর রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয় ইডির তরফ থেকে, ঘটনাচক্রে তার পরেই এসএসকেএমে ভর্তি হয়ে যান তিনি। এর পর শুরু হয় ‘কাকু-ইডি খেলা’!

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৩১
Share:

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

জ্ঞান দেওয়া বাঙালির অভ্যাস। ভিন্‌রাজ্যের ইডি আধিকারিকদের অনেকে এ কথা আগে শুনেছেন। কিন্তু বাংলায় কাজ করতে এসে তা এমন হাড়ে হাড়ে টের পেতে হবে, ধারণায় ছিল না তাঁদের। বিষয়: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের (যিনি সমধিক পরিচিত ‘কালীঘাটের কাকু’ নামে) গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ। এই কণ্ঠস্বর সংগ্রহ নিয়ে কম ‘নাটক’ দেখেনি রাজ্য। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, হাই কোর্টের নির্দেশ পেয়ে, রাতারাতি অভিযানে অবশেষে তা মিলেছে। কিন্তু ‘সহজ-সরল একটা কাজ এত কঠিন এবং জটিল করে করার জন্য’ যে অঢেল ‘আওয়াজ’ এবং পরামর্শের ঢল নেমেছে, তা প্রথমে মজার লাগলেও, পরে রীতিমতো ‘চাপের’ হয়ে উঠেছে ইডির কাছে। বন্যার জলের মতো পরামর্শ এসে চলেছে ইডির ইমেলে— কী করে অতি সহজ উপায়ে ‘কাকু’র কণ্ঠস্বর সংগ্রহ করা যেত!

Advertisement

সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয় ইডির তরফ থেকে, ঘটনাচক্রে তার পরেই এসএসকেএমে ভর্তি হয়ে যান তিনি। এর পর শুরু হয় ‘কাকু-ইডি খেলা’! অভিযোগ ওঠে এসএসকেএমের ভূমিকা নিয়েও। সেই পর্ব থেকেই ইডির কাছে ইমেলে পরামর্শ আসা শুরু হয়।

সাধারণত, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কোনও রাজ্যে তদন্ত করলে, এক জন নির্দিষ্ট আধিকারিককে মোতায়েন করা হয় জনতার দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখার জন্য। এ জন্য নির্দিষ্ট ইমেল আইডি বা ফোন নম্বর থাকে। বাংলার নিয়োগ দুর্নীতিতে যখন ইডি তদন্ত শুরু করল, তখনও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু গোল বেধেছে কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে। ইডি সূত্রে খবর, জনতার কাছ থেকে তদন্তে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যৎসামান্যই, উল্টে ভূরি ভূরি আসছে কেবল পরামর্শ আর জ্ঞান। কেউ লিখেছেন, ‘আপনারা এত বোকা কেন! আদালতে যাতায়াতের পথে কাকু কত কথা বলে থাকেন। সেই নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করলেই তো মিটে যায়!’ অনেকে আবার লিখেছেন, ‘এত ছোটাছুটি করছেন কেন বলুন তো? কাকুর দেওয়া কোনও টিভি সাক্ষাৎকারের অংশকে নমুনা হিসাবে নিলেই তো ল্যাটা চুকে যায়!’ এমন এক-আধটা নয়, বিচিত্র সব পরামর্শ এসেই চলেছে ইমেলে।

Advertisement

এক অবাঙালি ইডি আধিকারিক প্রসঙ্গ শুনেই হাসতে হাসতে বলে উঠলেন, ‘‘আরে প্রথমে তো বেশ মজাই লাগছিল। আমরা একটু হাসিঠাট্টাও করছিলাম। কিন্তু তার পর স্রোতের মতো পরামর্শ আসতে শুরু করল। এটা অসুবিধার হয়ে উঠেছে। কাজের জিনিস খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে ইমেলে।’’

এসএসকেএম হাসপাতালে কাকু। — ফাইল ছবি।

কিন্তু এই সব পরামর্শ নিয়ে হাসিঠাট্টা কেন? সত্যিই কি এ ভাবে নমুনা সংগ্রহ হতে পারে না? ইডি আধিকারিকেরা বলছেন, না, কোনও ভাবেই পারে না। ইডির এক কর্তা জানালেন, ‘এভিডেন্স অ্যাক্ট’-এর আওতায় জনতার এই সব পরামর্শবলির একটিও আদালতে ধোপে টিকবে না। কাকুর দেওয়া টিভি সাক্ষাৎকারকে নমুনা হিসাবে কোর্টে দিলে, বিপক্ষের আইনজীবী মুহূর্তে তা উড়িয়ে দেবেন। এতে সামগ্রিক ভাবে মামলাই দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। যে ব্যক্তি তাঁদের হেফাজতে রয়েছেন (এ ক্ষেত্রে সুজয়কৃষ্ণ), তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা পেতে গেলে আইনসম্মত নির্দিষ্ট পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে। একটি শব্দ-নিরোধক ঘরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, সাক্ষ্য প্রমুখের উপস্থিতিতেই কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। যেমনটি সে দিন আদালতের নির্দেশে রাতারাতি করা হল। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তার উপর মামলাটি এতটাই স্পর্শকাতর যে, তদন্ত প্রক্রিয়ায় সামান্য ভুলচুকেরও কোনও সম্ভাবনা রাখা চলবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement