দুর্ভোগ: মোটরবাইক, স্কুটারের চাকা ডুবেছে জলে। সেই অবস্থাতেই কোনও ক্রমে যাতায়াত। শনিবার, ভিআইপি রোডে। —নিজস্ব চিত্র।
পুরনো ব্যামো বেরিয়ে পড়ল রাতভর বৃষ্টিতে। ভিআইপি রোডের সব চেয়ে স্পর্শকাতর অংশ হলদিরাম, চিনার পার্ক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই সেখানে জল জমে যায়। দীর্ঘ যানজটে ব্যাহত হয় ট্র্যাফিক। যাত্রীরা উড়ান ধরতে আসার পথে সমস্যায় পড়েন। বিগত কয়েক বছর ধরে চলা এই সমস্যা রয়ে গিয়েছে আজও। যার ফলে শুক্রবার সারা রাতের বৃষ্টিতে ভিআইপি রোডের হলদিরাম, কৈখালি, চিনার পার্ক সংলগ্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ল।
শনিবার সকাল থেকেই কোমরজলে ডুবে ছিল ভিআইপি রোডের সার্ভিস রোড ও চিনার পার্ক এলাকা। যার জেরে কার্যত জলবন্দি অবস্থায় কাটাতে হল ওই এলাকার বিভিন্ন আবাসনের বাসিন্দাদের। নাজেহাল হলেন বেসরকারি হাসপাতাল, দোকানপাট ও মার্কেট কমপ্লেক্সে যাতায়াতকারীরা। সেখানে এ দিন জল ভেঙে যেতে গিয়ে এক বাইকচালক উল্টে পড়েছেন। খারাপ হয়ে গিয়েছে একের পর এক গাড়ি। নিউ টাউন, চিনার পার্ক থেকে বিমানবন্দরে যেতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছেন যাত্রীরা। বিকেলের দিকে জল খানিকটা নামলেও ভিআইপি রোডে যান চলাচলের গতি বিশেষ বাড়ানো যায়নি। বিমানবন্দরমুখী রাস্তায় তেঘরিয়া পর্যন্ত এবং কলকাতামুখী রাস্তায় আড়াই নম্বর গেট পর্যন্ত যানজট ছিল সন্ধ্যাতেও। তার আগে সকালের দিকে ভিআইপি রোডের যানজট প্রায় বাগুইআটিতে পৌঁছে যায়। হলদিরামের কাছে গাড়ি চলাচলের সার্ভিস রোডও জলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমনই হয় যে, এক সময়ে রাজারহাট, নিউ টাউনের দিক থেকে চিনার পার্কের দিকের রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিধাননগর পুরসভা নিকাশি নালা সংস্কারের কথা বছরের পর বছর বললেও পরিস্থিতি একই থেকে গিয়েছে। সেই সঙ্গেই তাঁদের অভিযোগ, মেট্রো স্টেশন তৈরির কাজের জন্য ভিআইপি রোডে বড় বড় গর্ত করা হয়েছে। বৃষ্টির জলে সেই সব গর্তের অবস্থান বুঝতে না পারায় বিপদের আশঙ্কাও থাকছে। হলদিরাম এলাকার একটি আবাসনের বাসিন্দা মধুমিতা রঞ্জন বললেন, ‘‘খুব জরুরি কাজে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে জলের মধ্যে পা পিছলে পড়ে গিয়েছি। মেট্রোর কাজের জন্য ফুটপাতও ভেঙে চৌচির।’’ চিনার পার্কে জমা জলে বিকল হওয়া গাড়ি ঠেলতে কেউ কেউ দু’হাজার টাকা অবধি নিয়েছেন বলে অভিযোগ। বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী বললেন, ‘‘প্রতি বারের মতো এ বারও বিমানবন্দর থেকে প্রচুর জল চিনার পার্কের দিকে নেমেছে। হিডকো-র এলাকা দিয়ে জল ধীর গতিতে নামছে। আমাদের দিকে সমস্যা নেই। সল্টলেকে জল নেমে গিয়েছে। দমদম ক্যান্টনমেন্ট খাল লাগোয়া কিছু জায়গায় জল রয়েছে। সর্বত্রই পাম্প চালু রয়েছে। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাসে আমরা উদ্বিগ্ন।’’
রাতভর বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে দমদম, উত্তর দমদম ও দক্ষিণ দমদম পুরসভার একাধিক এলাকা। পাতিপুকুর ও দমদম আন্ডারপাস জলমগ্ন হয়ে পড়ায় ওই দুই রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। পাতিপুকুর আন্ডারপাসে এক দিকের রাস্তা দিয়েই যান চলাচল করায় পুলিশ। দমদমের পি কে গুহ রোড, কালীধাম কলোনি, কমলাপুর এবং উত্তর দমদমের ২, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু জায়গায় জল জমে। দক্ষিণ দমদমের জ’পুর, সুভাষনগর, দমদম পার্ক-সহ একাধিক এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়।
পুর আধিকারিকেরা জানান, লোয়ার বাগজোলা খালে জল নামতে দেরি হওয়ায় সংলগ্ন এলাকায় তার প্রভাব পড়েছে। এ দিন সকালে সল্টলেকের করুণাময়ী, এফডি ব্লক-সহ কিছু জায়গায় জল দাঁড়ায়। পাঁচ নম্বর সেক্টর, নিউ টাউন বাসস্ট্যান্ড ও নিউ টাউনের কিছু জায়গায় জল জমেছিল। তবে বেলা বাড়তে জল নেমে যায়। আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দমদম ও সল্টলেকে যথাক্রমে ১০০ এবং ৮১.১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।