দখল: রাস্তার উপরেই ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণকাজের জন্য আনা বালি। বাগুইআটিতে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে সার্ভিস রোডে। রাতের অন্ধকারে নামানো হচ্ছে টন টন পাথরকুচি আর বালি। পরে সকাল হতেই সেই বালি ও পাথরকুচি সাইকেল ভ্যানে চেপে পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন নির্মাণস্থলে। এই ছবি ভিআইপি রোডের পাশের বিভিন্ন সার্ভিস রোড ও সংলগ্ন এলাকার। অদূরেই রয়েছে এক পুলিশকর্তা ও ট্র্যাফিক পুলিশের দফতর। কিন্তু সার্ভিস রোডে পড়ে থাকা বালি আর পাথরকুচি দেখেও দেখে না প্রশাসন।
পথ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখতে একাধিক বার নিষেধ করেছেন। কিন্তু তাঁর সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে না বাগুইআটি, রাজারহাট রোডের আশপাশের বিভিন্ন রাস্তায়। প্রায় প্রতি রাতেই সিন্ডিকেটের নির্মাণ সামগ্রী এনে রাস্তার উপরে নামানো হয়। সকাল হতেই সেই সব নির্মাণ সামগ্রী সাইকেল ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নির্মাণস্থলে। এর জেরে এক দিকে সার্ভিস রোড সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ে, অন্য দিকে, ধুলোবালি উড়ে তা বাতাসের দূষণ ঘটায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একাধিক সিন্ডিকেটের বালি-পাথরকুচি বিভিন্ন জায়গায় রাতের অন্ধকারে নামিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারও। কারণ, তাঁদের সিংহভাগই শাসক দলের বিভিন্ন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ। এমনকি, প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরাও এ সব নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। তাঁরা জানান, সিন্ডিকেট তাঁদের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করার বরাত নেয়। সেই সামগ্রী কোথায় রাখা হবে, তা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই ঠিক করেন। বাগুইআটি এলাকার এক প্রোমোটারের কথায়, ‘‘নির্মাণস্থলে অত বিপুল পরিমাণ নির্মাণ সামগ্রী রাখার জায়গা থাকে না। ফলে সিন্ডিকেটের লোকজনই নিজেদের দায়িত্বে মালপত্র এনে তাঁদের জায়গায় নামিয়ে রাখে। আমরা দরকার মতো আনিয়ে নিই।’’
বাগুইআটি, রাজারহাটের মতো এলাকায় বরাবরই সিন্ডিকেটের প্রবল দাপট। শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা লোকজনই তা নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, সিন্ডিকেটের লোকজন নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা আয় করেন। তা হলে কেন তাঁরা নিজেদের মালপত্র রাখার জন্য গুদামের ব্যবস্থা করেন না? কেনই বা সার্ভিস রোড দখল করে মালপত্র রাখা হবে? তাঁরা জানান, নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকায় রাস্তার ধারের বাড়ি ও ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা অসুবিধায় পড়ছেন। হাওয়া দিলেই ওই সব বাড়িতে ধুলোবালি ঢুকে যায়। বাসিন্দাদের ধারণা, গুদামের খরচ বাঁচিয়ে লাভের মাত্রা বাড়াতেই রাস্তার উপরে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখে সিন্ডিকেটগুলি।
উল্লেখ্য, যান চলাচল মসৃণ রাখতে অনেক বছর আগে ভিআইপি রোড চওড়া করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে সাইকেল, মোটরবাইক ও পথচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তৈরি করা হয়েছিল সার্ভিস রোডগুলি। কিন্তু বাগুইআটি এলাকার বিভিন্ন সার্ভিস রোড এখন নির্মাণ সামগ্রীর গুদাম বা অটো স্ট্যান্ডের মতো নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ভাবে তাদের সার্ভিস রোড দখল করে বালি-পাথরকুচি ফেলে রাখা নিয়ে আপত্তি রয়েছে পূর্ত দফতরেরও। মাস তিনেক আগে কয়েকটি জায়গা থেকে তারা নির্মাণ সামগ্রী আটক করে অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছিল। দফতরের আধিকারিকেরা জানান, পুলিশের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। আবারও অভিযান হবে। কারণ, সার্ভিস রোড সঙ্কীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি ধুলোবালি উড়ে নর্দমায় জমা হচ্ছে।
যদিও বিধাননগর কমিশনারেটের পদস্থ কর্তাদের দাবি, তাঁদের কাছে এ নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি শুনলাম। খোঁজ নিয়ে দেখছি। নিয়ম-বহির্ভূত কিছু হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’