—প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে এখনও বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। পুজোর কয়েক দিনেও সেই চিত্রের খুব বেশি বদল হবে না। সেই সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়া কিংবা দুর্ঘটনার বিষয়ও। তাই পুজোর মুখে সাধারণ মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে— আগামী কয়েক দিন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে কি আদৌ অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখা মিলবে? না কি ওই কয়েক দিন জুনিয়রদের দিয়েই চলবে পরিষেবা?
সরকারি হাসপাতালে সন্ধ্যায় ও রাতের দিকে অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখা মেলে না বলে হামেশাই অভিযোগ ওঠে। বেসরকারি হাসপাতালেও অনেকটা একই রকম অভিজ্ঞতা হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু রাজ্যে এখন ডেঙ্গির যা পরিস্থিতি, তাতে হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। কারও কারও অবস্থা সঙ্কটজনকও হচ্ছে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এমতাবস্থায় পুজোর ছুটিতে চিকিৎসকদের পাওয়া যাবে কি না, তা ভেবে উদ্বেগে সাধারণ মানুষ। যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর কথায়, ‘‘পরিষেবা কোনও ভাবেই ব্যাহত হবে না। প্রতিটি হাসপাতালই সেই মতো ব্যবস্থা নিয়েছে। ডেঙ্গির
চিকিৎসায় যুক্ত ডাক্তারদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’’ পরিষেবা সচল রাখার দাবি করেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিও। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রবিবার অষ্টমী হওয়ায় শুধু ওই দিন প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। বাকি দিন মিলবে পরিষেবা। সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বহির্বিভাগ চালু করতেই হবে। পুজোর সময়েও যেন তার অন্যথা না হয়। পাশাপাশি, পুজোর কয়েক দিন কোন বিভাগে কোন চিকিৎসকদের ডিউটি রয়েছে, তার তালিকা ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অন্য চিকিৎসকদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান উপাধ্যক্ষ অঞ্জন অধিকারী।
অন্য দিকে, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘চিকিৎসকদেরও পরিবার রয়েছে, পুজোর সময়ে এটা যেমন ভুললে চলবে না, তেমনই রোগীদের স্বার্থও যাতে বিন্দুমাত্র বিঘ্নিত না হয়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে। দু’টি বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখেই সব রকম বন্দোবস্ত করা হয়েছে।’’
আবার পুজোর দিনগুলিতে যাতে কোনও ভাবেই ট্রমা কেয়ারে পরিষেবা ব্যাহত না হয়, সে দিকে জোর দিয়েছেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিনের মতোই এক জন করে ট্রমা কেয়ারের নোডাল অফিসার থাকবেন। পাশাপাশি, প্রতিটি বিভাগ থেকে এক জন করে সিনিয়র চিকিৎসককে ওই বিভাগের জন্য এক-এক দিনের নোডাল অফিসার করা হয়েছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘পুজোর সময়ে যাতে প্রয়োজনে সহজেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসককে পাওয়া যায়, তার জন্যই নোডাল অফিসার নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর ফলে কোনও একটি বিভাগে ওই দিন কোন কোন চিকিৎসকের ডিউটি রয়েছে, তা আর খুঁজতে হবে না।’’ রীতিমতো হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করে সেই তালিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য দিনের মতো সংখ্যায় চিকিৎসক না থাকলেও সিনিয়র ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পুজোর মধ্যে রস্টার মেনেই কাজ করবেন বলে দাবি পিয়ারলেস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তাঁদের তরফে চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘আমাদের যে হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে, তা চালু থাকবে। রিসেপশনও খোলা থাকবে। পুজোর সময়ে আগে থেকে ঠিক করা অস্ত্রোপচারের রোগী থাকে না। ফলে শয্যার সমস্যা হবে না।’’ পুজোর চার দিন বহির্বিভাগ পরিষেবা বন্ধ থাকলেও জরুরি বিভাগে পুরোদমে পরিষেবা চালু থাকবে বলেই দাবি ফর্টিসের ফেসিলিটি ডিরেক্টর আশিস মুখোপাধ্যায়ের। পুজোর দিনগুলিতে প্রতিটি বিভাগেই এক জন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ২৪ ঘণ্টার জন্য দায়িত্বে রাখা হচ্ছে বলে জানান নারায়ণা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিষেবা সচল রাখতে কর্মীদের ক্ষেত্রেও সেই মতো রস্টার করা হয়েছে সেখানে।
কিন্তু পুজোর দিনগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের বাস্তবে কী অভিজ্ঞতা হয়, তা সময়ই বলবে।