মাইক্রোকারেন্ট ফেশিয়ালের খরচ কত, কারা করাতে পারবেন? ছবি: ফ্রিপিক।
গালের উপর থেকে নীচ অবধি হালকা করে ডিভাইসটি বুলিয়ে দিলেই উঠে যাবে দাগছোপ। ব্রণ-ফুস্কুড়ির সমস্যা তো দূর হবেই, ত্বক টানটান ও জেল্লাদারও হয়ে উঠবে। তার জন্য আলাদা করে মাস্ক বা ক্রিম দিয়ে মালিশ করার দরকারই পড়বে না। সবটাই করবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ। এমনই এক ফেশিয়াল থেরাপি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কমবয়সিদের মধ্যে। বলিউড থেকে হলিউড— অনেক নামজাদা তারকাই নাকি এই ফেশিয়াল করিয়ে মুখে তারুণ্যের ছাপ ধরে রাখছেন। আর এতেই আকৃষ্ট হচ্ছেন কমবয়সিরাও।
কী এই মাইক্রোকারেন্ট ফেশিয়াল?
সাধারণ ফেশিয়ালের থেকে অনেকটাই আলাদা এর প্রক্রিয়া। ত্বকের একেবারে গভীর থেকে ময়লা, মৃত কোষ টেনে বার করা যায় এতে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা, দূষণ, চারপাশের ধুলোবালি এবং মেকআপের উপাদান থেকে ত্বকের যা ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করার পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ডিপ ক্লিনজিং’। মাইক্রোকারেন্ট সেই কাজটিই করে তবে অন্য ভাবে।
এটি একটি বৈদ্যুতিন যন্ত্র যা ফেশিয়ালের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যন্ত্রটি চালু করলেই বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত হবে ত্বকের নীচ দিয়ে। সাধারণ ফেশিয়ালের হাতের তালুতে চাপ দিয়ে মুখে ধীরে ধীরে মালিশ করা হয়। কিন্তু মাইক্রোকারেন্ট ফেশিয়ালে সবটাই হয় যন্ত্রের সাহায্যে। চক্রাকারে যন্ত্রটি গালে, কপালে, নাকের দু’পাশে ঘোরালে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ত্বকের উন্মুক্ত রন্ধ্র থেকে যত ধুলোবালি, ময়লা, মৃত কোষ সব টেনে বার করে আনবে। কুঁচকে যাওয়া চামড়া টানটান করবে। এমনকি, ত্বকের কোলাজেন তৈরিতে নাকি বিশেষ ভূমিকা নেবে।
রোদে ঘুরে যাঁদের মুখে কালচে দাগছোপ পড়েছে, অথবা যাঁদের মুখে-কপালে বেশি ব্রণ-ফুস্কুরির ধাত রয়েছে, তাঁদের অনেকেই মাইক্রোকারেন্ট ফেশিয়ালের দিকে ঝুঁকছেন। ভারতের অনেক সালোঁতেই এই ফেশিয়াল করানো হয়। খরচ পড়ে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে।
মাইক্রোকারেন্ট ফেশিয়াল হঠাৎ কেন এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল, তার পিছনেও কারণ আছে। ১৯৮০ সালে ফেশিয়াল প্যারালাইসিস সারাতে মাইক্রোকারেন্ট থেরাপি করতেন চিকিৎসকেরা। মুখের ক্ষত, অসাড়তা সারাতে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পাঠিয়ে চিকিৎসা করা হত। বর্তমানে এই ধরনের প্রক্রিয়া অ্যান্টি-এজিং থেরাপির কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক তারকাই এখন এই ধরনের থেরাপির দিকে ঝুঁকছেন। কম সময়ে মুখের ক্ষত ঢেকে ফেলতে এটি নাকি খুবই কার্যকরী প্রক্রিয়া।
মাইক্রোকারেন্ট কি সকলের জন্য নিরাপদ?
দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের তথ্য বলছে, মাইক্রোকারেন্ট সকলের জন্য নয়। বৈদ্যুতিন যন্ত্র ত্বকের জন্য কতটা কার্যকরী হবে, তা এখনও জানা যায়নি। এই পদ্ধতিতে চটজলদি ত্বকের ক্ষত ঢাকা যায় ঠিকই, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হতে পারে তা জানা যায়নি।
রিপোর্ট আরও বলছে, হার্টের রোগী বা যাঁদের পেসমেকার বসানো আছে, অন্তঃসত্ত্বা, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, হরমোনের থেরাপি করাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা এই থেরাপি একেবারেই করাবেন না। আগে লেজ়ার চিকিৎসা অথবা বোটক্স করালে, পরে মাইক্রোকারেন্ট থেরাপি না করাই ভাল। যন্ত্র কিনে এই ধরনের ফেশিয়াল বাড়িতে করতেও নিষেধ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সামান্য ভুলে ত্বকের বড় ক্ষতি হতে পারে। প্রদাহজনিত সমস্যা বা হরমোনের গোলমালও দেখা দিতে পারে। তাই ত্বক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই এই ফেশিয়াল করা উচিত বলেই মনে করা হচ্ছে।