হারায়ে খুঁজি: সেই সমাধিক্ষেত্র। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
তিরিশটা বছর পার হয়ে গিয়েছে। বেদখল হওয়া হেরিটেজ সম্পত্তির পুনরুদ্ধারের জন্য রাজ্য সরকারের এক দফতর থেকে অন্য দফতরে কেবল চিঠিই লেখালেখি হয়েছে। বাস্তবে কলকাতা পুরসভার খাতায় হেরিটেজ সম্পত্তির তালিকাভুক্ত টিপু সুলতানের পরিবারের সমাধিক্ষেত্রে জবরদখলকারীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
৫১/১এ সতীশ মুখার্জি রোড। কালীঘাট পার্কের পূর্ব দিকে ‘মাইসোর ফ্যামেলি ফতেহা ওয়াকফ এস্টেট’ নামে পরিচিত প্রায় ১২ বিঘার জমিটি পুরসভার নথিতে গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ বলে চিহ্নিত। এখানেই শায়িত রয়েছেন টিপু সুলতানের পাঁচ ছেলে, দুই মেয়ে-সহ পরিবারের সদস্যেরা। ওই ঐতিহ্যমণ্ডিত জায়গায় রয়েছে টিপুর জামাতা নিজামউদ্দিনের সমাধিসৌধ।
অভিযোগ, টিপু পরিবারের এই সমাধিক্ষেত্রের বেশির ভাগ অংশে ঝুপড়ি তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস চলছে। বেদখল হওয়া হেরিটেজ সম্পত্তি উদ্ধারে ওয়াকফ বোর্ড, সংখ্যালঘু দফতর ও কলকাতা পুরসভাকে একাধিক বার চিঠি লিখেছেন টিপু সুলতানের বংশধর শাহিদ আলম। শাহিদ সাহেবের অভিযোগ, ‘‘১৯৯০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে টিপু সুলতানের পরিবারের সমাধিক্ষেত্র জবরদখল করে পাকাপাকি ভাবে বাস করতে শুরু করেন স্থানীয়েরা। এখন সমাধিক্ষেত্রের প্রায় পুরোটাই দখল হয়ে গিয়েছে। হেরিটেজ সম্পত্তি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন সরকারি মহলে বহু বার চিঠি দিয়েও কোনও কাজ হয়নি।’’
আঠারো শতকে ভারতে ইংরেজ বিরোধিতার অন্যতম প্রধান নায়ক টিপু সুলতানের পরিবারের স্বজনদের ঠাঁই হয়েছিল এই কলকাতায়। শ্রীরঙ্গপত্তনমের যুদ্ধে টিপুর পরাজয় এবং মৃত্যুর পরে (১৭৯৯) প্রথমে তাঁদের রাখা হয়েছিল ভেলোর দুর্গে। সেখানেও বিদ্রোহ হওয়ায় টিপু সুলতানের পুত্র, কন্যা-সহ পুরো পরিবারের আস্তানা হয়েছিল এই শহরে।
শাহিদ জানান, সতীশ মুখার্জি রোডে টিপু-পরিবারের দশ-বারোটি সমাধি ভবন ছাড়াও চমৎকার একটি মসজিদ কেবল স্থাপত্যের নিরিখেই নয়, ঐতিহ্যের মাপকাঠিতেও উল্লেখযোগ্য। ওই মসজিদের দু’টি সুন্দর মিনার এবং দু’টি গম্বুজও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে বসেছে। শাহিদের অভিযোগ, ‘‘গোটা চত্বর বেদখলকারীদের হাতে চলে গিয়েছে। ফলে ঐতিহ্যমণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও ওই জায়গা সংস্কার করতে আমরা এলাকায় ঢুকতেই পারি না। সরকার শীঘ্রই ওই হেরিটেজ সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা না করলে এ বার বড়সড় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’’
ঐতিহ্যশালী সম্পত্তির জবরদখল প্রসঙ্গে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘টিপু সুলতানের পরিবারের সমাধিক্ষেত্রের মতো এ রকম হেরিটেজ সম্পত্তি বেদখল হওয়া সত্যিই বিস্ময়ের ব্যাপার। হেরিটেজ সম্পত্তির তালিকাভুক্ত সত্ত্বেও এ রকম বেশ কিছু সম্পত্তি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।’’
এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল গনি বলেন, ‘‘হেরিটেজ সম্পত্তি জবরদখলমুক্ত করতে কলকাতা পুরসভাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ পুনরুদ্ধারে কী পদক্ষেপ করবে কলকাতা পুরসভা? তা জানতে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ফোন এবং মেসেজ করা হলে কোনও উত্তর মেলেনি।