Kunal Ghosh Abhishek Banerjee

সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বলুন ভুল বলেছি, মেনে নেব! বয়কট বিতর্কে অভিষেকের মন্তব্যের ‘পাল্টা’ কুণালের

আরজি কর-কাণ্ডের সময়ে যে শিল্পীরা রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সম্পর্কে আক্রমণাত্মক কথা বলেছিলেন, তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁদের বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন কুণাল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:১৪
Share:

(বাঁ দিক থেকে) কুণাল ঘোষ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

পুজোর পর থেকেই আস্তে আস্তে আরজি কর নিয়ে নাগরিক আন্দোলনের ‘উত্তাপ’ কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে তার রেশ ধরেই শাসকশিবিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হল। যা নিয়ে আলোড়িত হচ্ছে তৃণমূল। সৌজন্য কুণাল ঘোষ এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আরজি কর-কাণ্ডের সময়ে যে শিল্পীরা রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সম্পর্কে ‘আক্রমণাত্মক’ কথা বলেছিলেন, তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁদের বয়কট করার ডাক দিয়েছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল। বৃহস্পতিবার কার্যত উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বলেছেন, তিনি প্রতিবাদীদের বয়কটের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন না। এবং এ-ও বলেছেন যে, কুণালের কথা ‘দলের বক্তব্য’ নয়। অভিষেকের সেই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কুণাল যা বলেছেন, তাতে স্পষ্ট যে, তিনি নিজের অবস্থানে ‘অনড়’। তার পাশাপাশি তিনি দিয়েছেন ব্যাখ্যাও।

কুণালের কথায়, ‘‘কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমি কোনও প্রতিবাদীকে বয়কটের কথা বলিনি। যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন, যাঁরা তৃণমূল কর্মীদের বলেছিলেন ‘চটিচাটা’, যাঁরা বাংলাদেশ মডেলে মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যছাড়া করার কথা বলেছিলেন, আমি তাঁদের বয়কট করার কথা বলেছি।’’ সেখানেই থামেননি কুণাল। নিজের ‘অনড়’ অবস্থান বোঝাতে তিনি বলেন, ‘‘আমি গতকাল যা বলেছি, আজও তাই বলছি, আগামিকালও তা-ই বলব।’’

Advertisement

দলের মুখপাত্র কুণাল যা বলেছেন, তা দলের অবস্থান নয় বলে উল্লেখ করেছিলেন অভিষেক। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ‘‘পার্টির তরফে কেউ বলেছে? কোনও নোটিস দেখেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা আমি জেনারেল সেক্রেটারি কিছু বলেছি?’’ কুণাল পাল্টা বলেছেন, ‘‘সাধারণ তৃণমূল কর্মীদের ভাবাবেগের জায়গা থেকে আমি যা বলেছি, ঠিক বলেছি। আর দলের সর্বময় নেত্রী মমতা’দি। তিনি যদি বলেন, আমি ভুল বলেছি, তা হলে আমি মেনে নেব।’’

গত ৩০ ডিসেম্বর ওই বয়কটের আওয়াজ তুলেছিলেন কুণাল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল বলেছিলেন (সমাজমাধ্যমে লিখেওছিলেন), ‘‘যে শিল্পীরা পরিকল্পিত কুৎসা করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী-সহ সরকার ও দলকে জঘন্য ভাষায আক্রমণ করেছেন, সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন, তৃণমূল সমর্থকদের কুৎসিত ভাষায় অপমান করেছেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্ররোচনা ছড়িয়েছেন, তাঁদের এই শীতের মঞ্চে তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত জলসা বা অনুষ্ঠানে যেন না দেখা যায়। এই শীতে এঁদের বয়কট করা হোক। কোনও তৃণমূল নেতার কোনও বিভ্রান্তি থাকলে উচ্চতর নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে নিন। কর্মী-সমর্থকদের আবেগকে সম্মান দিন।’’

কুণাল ‘উচ্চতর নেতৃত্ব’ বলতে যাঁদের কথা বলেছেন, তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামোয় অভিষেক সেই পর্যায়েই পড়েন। সেই অভিষেকই বৃহস্পতিবার বলেছেন, “কোথায় কাকে দিয়ে গান গাওয়াবে, কখন গাওয়াবে, কে গান গাইবে, আমি জোর করে কারও মাথায় চাপাতে চাই না। আমি কোথা দিয়ে হাঁটব-চলব, সেটা আমার সিদ্ধান্ত। স্বাধীনতা সকলের আছে।’’ এর পরেই অভিষেক স্পষ্ট করে দেন, কুণালের কথা ‘দলের বক্তব্য’ নয়। অভিষেক বলেন, ‘‘পার্টির তরফে কেউ বলেছে? কোনও নোটিস দেখেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা আমি জেনারেল সেক্রেটারি কিছু বলেছি?’’ বস্তুত, অভিষেক স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই জানিয়েছেন, বয়কটের তালিকাভুক্ত এক শিল্পীর অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট শিল্পী তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনিই মধ্যস্থতা করে সেই শিল্পীর অনুষ্ঠান করানোর বন্দোবস্ত করেন। তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ বলেন, ‘‘যে হেতু উনি (সেই শিল্পী) ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করেছেন, তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে মেলা কমিটির সদস্য-সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করি। কথা বলি। যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি শো (অনুষ্ঠান) করেছেন পরে জানতে পারি।”

আরজি কর-কান্ড এবং তার পরবর্তী নাগরিক আন্দোলন নিয়ে তিনি যে ‘ভিন্ন’ অবস্থান নিয়েছিলেন, তা আগেই সর্বসমক্ষে বুঝিয়েছেন অভিষেক। ১৪ অগস্ট মধ্যরাতে ‘মেয়েদের রাত দখল’ দেখেছিল সারা বাংলা। তার পরে ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে অভিষেক মহিলাদের সেই আন্দোলনকে সম্মান জানিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে, সেই পর্বে অভিষেকই ছিলেন তৃণমূলের প্রথম কোনও বড় নেতা, যিনি রাত দখল আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা এবং সংহতি জানিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি আবার বলেছেন, ‘‘১৪ অগস্ট যাঁরা রাত দখলের ডাক দিয়েছিলেন, কেউ সমর্থন করুক বা না-করুক, আমি সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। আমি আজও একই কথা বলছি। কারও ভাল লাগতে পারে বা খারাপ লাগতে পারে।”

দীর্ঘ দিন দলের অন্দরে কুণালের পরিচয় ছিল অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সেই ‘নৈকট্য’ আর দেখা যাচ্ছে না বলেও দাবি তৃণমূলের অনেকের। তবে ‘ঘনিষ্ঠতা’র মতোই ‘অঘনিষ্ঠতার’ খবর অসমর্থিত সূত্রের। গত নভেম্বরে অভিষেকের জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কুণাল সমাজমাধ্যমে তাঁকে ‘ভাবী মুখ্যমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তবে কুণালের বয়কট তত্ত্ব নিয়ে উল্টো অবস্থানের কথা জানান সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। পাল্টা কুণাল জানালেন, তিনি তাঁর অবস্থানেই অনড়। যা বলেছেন, ঠিক বলেছেন। আবার বলবেন। শুধু নেত্রী মমতা যদি বলেন, তিনি ‘ভুল’ বলেছেন, তা হলে মেনে নেবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement