Fire Accident

কলোনিতে আগুন, শীতের রাতে ঘরহারা বাসিন্দারা

২২/১৯ ক্যানাল সার্কুলার রোডের ওই কলোনির বাসিন্দারা জানান, এ দিন সন্ধ্যা ছ’টা থেকে সওয়া ছ’টার মধ্যে কলোনিতে আগুন দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:০১
Share:

আগুনের প্রত্যক্ষদর্শী শঙ্কর সর্দার ও তাঁর পরিবার। নিজস্ব চিত্র

শীতের সন্ধ্যার অন্ধকার চিরে মাঝে মাঝেই আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলে উঠছিল। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছিল কালো ধোঁয়া। যানজটে স্তব্ধ ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে থেমে থাকা বাস-গাড়ির ভিতর থেকে সেই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠছিলেন অফিস ফেরত যাত্রীদের অনেকেই। বাইপাস লাগোয়া নেতাজিনগর কলোনিতে ওই অগ্নিকাণ্ডের জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক রকম স্তব্ধ হয়ে পড়ে উত্তর এবং পূর্ব কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা। তবে পুলিশ জানিয়েছে, আগুনে কেউ হতাহত হননি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছে, কলোনির ৩০টির বেশি ঘর আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। তবে সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আগুন নেভাতে গিয়ে জখম হন এক দমকলকর্মীও।

Advertisement

বাইপাসের উপরে বেঙ্গল কেমিক্যালের কাছে পূর্বাশা আবাসনের পাশেই নেতাজিনগর কলোনি। ২২/১৯ ক্যানাল সার্কুলার রোডের ওই কলোনির বাসিন্দারা জানান, এ দিন সন্ধ্যা ছ’টা থেকে সওয়া ছ’টার মধ্যে কলোনিতে আগুন দেখা যায়। মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কলোনি-সহ গোটা এলাকায়। ভয় পেয়ে বহু মানুষ কলোনি ছেড়ে উঠে আসেন ইস্টার্ন বাইপাসে। কোনও মতে আগুন থেকে শেষ সম্বলটুকু বাঁচিয়ে বহু বাসিন্দাকেই দেখা যায় বাইপাসের উপরে জিনিসপত্র এনে জড়ো করতে। দমকলের ১৫টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেন দমকলকর্মীরা। কিন্তু অপ্রশস্ত কলোনির রাস্তায় দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ায় আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খান দমকলকর্মীরা। অন্য দিকে কলোনি তো বটেই, বাইপাসের একটি অংশের বিদ্যুতের লাইন সাময়িক ভাবে বিচ্ছিন্ন থাকায় অন্ধকারে এক সময়ে আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েন দমকলকর্মীরা। ওই অবস্থায় স্থানীয়েরা টর্চ, মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে দমকলকর্মীদের সাহায্য করেন।

যদিও স্থানীয় মানুষের একাংশের অভিযোগ, দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি করেছে। প্রাথমিক ভাবে কলোনির লোকজন, স্থানীয় মানুষ এমনকি বাইপাসের সংলগ্ন দত্তাবাদের বস্তির বাসিন্দারাও আগুনে জল ঢালার কাজ শুরু করেন। তার জেরেই বিরাট বস্তির সর্বত্র আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। না হলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। যদিও দমকলের দাবি, তাদের ইঞ্জিন সময় মতোই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এই আগুন লাগার পরে আশপাশের রাস্তায় যানজট হয়। তা কাটিয়ে আসতে দমকলের কিছুটা সময় লেগেছে বলে সূত্রের খবর।

Advertisement

আরও পড়ুন: কাল কাঁথির সভায় আমন্ত্রণ শিশিরকে, জানালেন, অসুস্থ তাই থাকছেন না

আরও পড়ুন: নেপালে গভীর সঙ্কট, দলীয় চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরলেন ওলি

কী করে আগুন লাগল কলোনিতে?

দমকলের প্রাথমিক ধারণা, রান্নার আগুন কিংবা কলোনির কোনও দোকানে শর্ট সার্কিটের জেরে আগুন লাগে। বাসিন্দারা জানান, অগ্নিকাণ্ডের মধ্যেই পর পর কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার শব্দও পাওয়া যায়। তার পরেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে কলোনির বিভিন্ন ঘরে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু এবং স্থানীয় বিধায়ক তথা ক্রেতা-সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। পুরমন্ত্রী জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ এবং অন্যান্য ব্যবস্থা করা হয়। পুড়ে যাওয়া ঘর কলকাতা পুরসভা মেরামত করে দেবে বলেও জানান ফিরহাদ।

আগুনের জেরে বাইপাস-সহ আশপাশের এলাকায় এ দিন সন্ধ্যায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে ভিআইপি রোড, উল্টোডাঙা মোড়, কাঁকুড়গাছি, নারকেলডাঙা মেন রোড, বেলেঘাটা, সল্টলেকের মতো বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে পড়ে। বেলেঘাটা মেন রোডের উপরে যানজটের জেরে পুলিশকে দেখা যায় কোনও মতে গাড়ি সরিয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকার জায়গা করতে। যানজটে আটকে উল্টোডাঙা স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে পারেননি বহু যাত্রী।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের আশপাশে দমকলের ইঞ্জিন রাখার জায়গা ছিল না। ফলে দমকলের ইঞ্জিনগুলি বাইপাসের উপরেই বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়ায়। তার জেরে গার্ডরেল ফেলে বাইপাসে প্রাথমিক ভাবে রাস্তা বন্ধ করতে বাধ্য হয় পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement