দুর্দশা: ল্যান্সডাউন বাজারের জরাজীর্ণ অবস্থা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
মাসকয়েক আগে কলকাতা পুরসভা পরিচালিত পার্ক সার্কাস বাজারে চাঙড় ভেঙে পড়ায় এক পথচারী গুরুতর আহত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই ঘটনার পরেও পুর বাজারগুলির হাল কি ফিরেছে?
কলকাতা পুরসভা পরিচালিত এমন বাজারের সংখ্যা ৫১। যার অন্যতম দক্ষিণ কলকাতার ল্যান্সডাউন বাজার। পার্ক সার্কাস বাজারের মতোই বেহাল দশা এই বাজারেরও। ভিতরে ঢোকার মুখেই চোখে পড়ে ভগ্নপ্রায় চেহারাটা। চাঙড় খসে ইটের কঙ্কালসার কাঠামো বেরিয়ে পড়েছে। বাজারের চার দিক ভরে গিয়েছে আগাছায়। দোকানিদের অভিযোগ, গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ল্যান্সডাউন বাজারের কোনও সংস্কার হয়নি। পুরোপুরি ভেঙে সংস্কারের কথা শোনা গিয়েছে বহু বার, কিন্তু সেই কাজ শুরু হয়নি আজও। তাই ক্ষোভে ফুঁসছেন ব্যবসায়ীরা। পুরসভার বাজার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ আমিরুদ্দিন ববির আশ্বাস, ‘‘ল্যান্সডাউন বাজারের বর্তমান ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী ভাবে অন্যত্র সরানোর জায়গা ঠিক হয়েছে। পুজোর ছুটি শেষ হয়েছে। এ বার বিষয়টি নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। ওঁরা না সরলে বাজার পুরোপুরি ভেঙে দিয়ে কাজ করা যাবে না।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, ল্যান্সডাউন বাজারটি পুরো ভেঙে দিয়ে পিপিপি মডেলে নতুন করে গড়া হবে। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ সন্দীপরঞ্জন বক্সী জানান, লেক মার্কেটের আদলে গড়া হবে ওই বাজারটি। আড়াই বিঘা জমির উপরে নতুন আটতলা ভবন তৈরি করা হবে। প্রথম দু’টি তলা বাজারের বর্তমান ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ করা হবে। তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৫০০।
এই মুহূর্তে জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকা ল্যান্সডাউন বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ‘‘অবিলম্বে বাজারের সংস্কার করা না হলে যে কোনও দিন বড়সড় বিপদ ঘটতে পারে। একাধিক বার চাঙড় ভেঙেছে।’’ তাঁরা জানান, অল্প বৃষ্টি হলেই দোকানের সামনে জল দাঁড়িয়ে যায়। ক্রেতাদের বাজার করতে ভীষণ সমস্যায় পড়তে হয়। অবিলম্বে ওই বাজারের সংস্কারের দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দোকান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। সেই সময়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঘটনাস্থলে গিয়ে বাজার দ্রুত সংস্কার করা হবে বলে আশ্বাস দেন। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল, সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু করার পাশাপাশি সমস্ত দোকানির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও পুরসভার বাজার বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছাড়াই বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ী ওখানে ব্যবসা করছেন।
পার্ক সার্কাস পুর বাজারে দুর্ঘটনার পরে পুরসভার তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, শহরের পুর বাজারগুলির কোনটার কী দশা, তা জানতে সমীক্ষার কাজ শুরু করা হবে। পুর বাজার বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই কয়েকটি বাজার নিয়ে সমীক্ষার কাজ শেষ করেছি। সমস্ত বাজারের সমীক্ষার কাজ শেষ হলে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, বাঘা যতীন বাজার, বেহালার শখেরবাজার, রামলাল বাজার, কালীঘাট বাজারের সঙ্গিন অবস্থার প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়েছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘যে সমস্ত বাজারের সংস্কার অবিলম্বে করা দরকার, সেখানে শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যেই পার্ক সার্কাস বাজারে মেরামতির কাজ শেষ হয়েছে।’’