—প্রতীকী চিত্র।
কোথাও ঘণ্টাপিছু চাওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা, কোথাও ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অর্থাৎ, পুরসভার নির্ধারিত ‘রেটের’ প্রায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি! কিছু কিছু জায়গায় আবার সপ্তাহের পাঁচ দিন এক রকম ‘রেট’, সপ্তাহান্তে আর এক রকম। এমনও জায়গা আছে, যেখানে তিন ঘণ্টার বেশি গাড়ি রাখতে হলেই প্রতি ঘণ্টায় দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। যেমন খুশি টাকা হাঁকার এই হিসাব থেকে বাদ যাচ্ছে না মোটরবাইকও।
পার্কিং ব্যবস্থা ঘিরে শহরে এই মুহূর্তে এমনই দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ। দাবি মতো টাকা দিতে রাজি না হলে, গাড়ি বা মোটরবাইক রাখার জায়গা হচ্ছে না। অভিযোগ, কোথাওই টাঙানো থাকছে না পুরসভার পার্কিং খরচ সংক্রান্ত নির্দেশিকা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে মিলছে না কোনও রসিদ। বহু ক্ষেত্রেই টাকা যাঁরা আদায় করছেন, তাঁদের কোনও ইউনিফর্ম বা পরিচয়পত্র থাকছে না।
এমন সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু দিন আগে নয়া পার্কিং নীতি ঘোষণা করেছিল কলকাতা পুরসভা। প্রায় তিন-চার গুণ হারে পার্কিং ফি বাড়িয়ে পুরসভার তরফে দাবি করা হয়, এতে পুর প্রশাসনের আয় যেমন বাড়বে, তেমনই কমবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। জানানো হয়, নতুন করে পার্কিং এলাকার জন্য দরপত্র ডাকা হচ্ছে। নির্বাচিত সংস্থার কর্মীদের হাতে হাতে ই-পস যন্ত্র তুলে দেওয়া হবে। গাড়ি রাখার সময় দিলেই সেই যন্ত্র থেকে রসিদ বেরিয়ে আসবে। তাতে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে অথবা নগদে ফি মেটানো যাবে। এতে বন্ধ হবে যেমন খুশি টাকা চাওয়া।
কিন্তু চালু হওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই প্রত্যাহার করা হয় বর্ধিত পার্কিং ফি। সেই সময়ে শাসকদলের এক নেতা প্রকাশ্যেই জানান, বাড়তি খরচের বোঝা সাধারণ মানুষের উপরে চাপাতে চায় না রাজ্য। তাই প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে বর্ধিত পার্কিং ফি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, এর ফলে গাড়ি নিয়ে বেরোনো মানুষ কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেললেও ফের শুরু হবে না তো যেমন খুশি টাকা তোলার পার্কিং-দুর্নীতি? বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়ে উঠেছে।
গত শুক্রবারই যেমন ধর্মতলার কাছে পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে মেট্রো গলিতে জরুরি কাজে যাওয়ার কথা ছিল এক ব্যক্তির। গাড়ি দাঁড় করাতেই চালককে নীল পোশাক পরা এক জন বলেন, ‘‘এক ঘণ্টার জন্য কিন্তু ৪০ টাকা। তা-ও কোনও রসিদ মিলবে না।’’ পুরসভার দেওয়া রসিদ কাটার যন্ত্র কোথায়? জানতে চাইলে বলা হয়, যন্ত্র ফেরত নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কারা, সেই উত্তর মেলেনি। ওই ব্যক্তির আরও জিজ্ঞাস্য ছিল, পুরসভার এক ঘণ্টার পার্কিং খরচ তো ১০ টাকা। তা হলে বাকিটা কিসের? উত্তর মেলেনি তারও। উল্টে হাবেভাবে বোঝানো হয়েছে, না পোষালে আগে দেখুন।
এর পরেই কলকাতা পুরসভার পার্কিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের দ্বারস্থ হন ভুক্তভোগী। মেয়র পারিষদ আশ্বাস দেন, দ্রুত বিষয়টি দেখে নেবেন। কিন্তু, কাজ সেরে ফেরার পরে এক ঘণ্টারও কম সময় থাকার জন্য সেই বিনা রসিদে ৪০ টাকা দিয়েই বেরোতে হয় ওই ব্যক্তিকে। একই চিত্র দেখা গিয়েছে ক্যামাক স্ট্রিট অঞ্চলেও। সেখানে এক ব্যক্তি গাড়ি নিয়ে পৌঁছতেই একই রকম নীল পোশাক পরা ব্যক্তি বলেন, ‘‘জানেন তো, শনি-রবিবার কুড়ি টাকা করে বেশি।’’ গাড়ির মালিক বললেন, ‘‘দু'ঘণ্টার জন্য তা হলে কত দিতে হবে?’’ নীল পোশাক পরিহিত ব্যক্তির দাবি, ‘‘এমনিতে সারা সপ্তাহে ৬০ টাকা নিই। না-হয় ৮০ টাকা দেবেন। এ ক্ষেত্রেও রসিদ মিলবে না।’’ গড়িয়াহাটে আবার গাড়ি রাখার মুখে এক চালককে শুনতে হল, ‘‘ঘণ্টায় কিন্তু ৫০। তিন ঘণ্টার বেশি হয়ে গেলেই ১০০ করে লাগবে।’’
এ প্রসঙ্গে রবিবার দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’ মেয়র ফিরহাদ হাকিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পার্কিং ফি নিয়ে বেশ কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ পাচ্ছি। এটা আটকানোর জন্যই নতুন পার্কিং নীতি চালু করেছিলাম। কিন্তু কার্যকর করতে পারিনি। এখন এই অভিযোগের দায় ঘাড়ে পড়ছে।’’