Coronavirus in West Bengal

কোভিডমুক্তির পরেও নিতে আসেনি কেউ, ঠাঁই হাসপাতালে

অগত্যা প্রায় এক মাস ধরে ওই বৃদ্ধের ঠিকানা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৫৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

আটাত্তর বছরের বৃদ্ধ কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরেই ফোন গিয়েছিল তাঁর সম্পর্কিত নথিতে থাকা ফোন নম্বরে। কিন্তু অপর প্রান্তে ফোনটা যিনি ধরলেন, তিনি শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের সহকারী সুপার। বিষয়টি দেখে-শুনে বৃদ্ধ যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখানকার কর্তৃপক্ষ হতবাক। বুঝতে পারলেন, ওই বৃদ্ধের নথিতে থাকা নম্বরটি ভুল!

Advertisement


অগত্যা প্রায় এক মাস ধরে ওই বৃদ্ধের ঠিকানা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। শুধু ওই রোগীই নন, ঠিকানা ঠিকঠাক না থাকায় আরও কয়েক জন কোভিডমুক্তের ঠাঁই হয়েছে ওই হাসপাতালেই। যাঁদের মধ্যে তিন জনেরই বয়স সত্তরের উপরে। মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কথায়, ‘‘সুস্থ হয়ে গেলেও ওই রোগীদের তো রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া যায় না। মানবিকতার খাতিরে তাঁদের হাসপাতালেই রাখতে হয়েছে। তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য কী করা যায়, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।’’


মাঝেমধ্যেই খবর মেলে, বয়স্ক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে পরিজনদের আর খোঁজ মিলছে না। ফলে শহর ও জেলার অনেক হাসপাতালেই এমন রোগীরা দিনের পর দিন শয্যা দখল করে থেকে যান। তাঁদের খাওয়াদাওয়া থেকে পোশাক-পরিচ্ছদ বা চিকিৎসার সব দায়িত্বই নিতে হয় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে। সেই সঙ্গে এখন কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরেও রোগীদের অনেককে ফিরিয়ে না নেওয়ায় সমস্যা বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আধিকারিকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও অন্য চিকিৎসার হয়তো প্রয়োজন রয়েছে। হাসপাতালে তো

Advertisement


শনিবার দুপুর পর্যন্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিডে আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন ৯৩ জন। কোভিড আক্রান্ত সন্দেহে ভর্তির সংখ্যা আরও ৩১। এর পাশাপাশি, ওই হাসপাতালে অন্যান্য চিকিৎসার জন্য ভর্তি আছেন ৫০০ জন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত এক বছর ধরে পরিজনের খোঁজ না পাওয়া জনা ছয় রোগী এমনিতেই সেখানে রয়ে গিয়েছেন। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন করোনা থেকে সুস্থ হওয়া জনা চারেক রোগী। সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বরে কলকাতা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছিল ৭৮ বছরের ওই বৃদ্ধকে। নথিতে তাঁর ঠিকানা লেখা ছিল টালিগঞ্জ এলাকার। ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছিল। তিনি সুস্থ হতেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে জানা যায়, সেটি এম আর বাঙুর হাসপাতালের সহকারী সুপারের নম্বর। কে বা কারা, কেন সেই নম্বর দিয়েছিলেন, তা আজও অজানাই রয়েছে। তবে টালিগঞ্জ এলাকাতেও খোঁজ নিয়ে ওই বৃদ্ধের পরিজনের খোঁজ পায়নি পুলিশ-প্রশাসন।


সূত্রের খবর, ওই বৃদ্ধকে বাঙুর হাসপাতাল থেকেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আনা হয়েছিল। তাই সেখানকার কর্তৃপক্ষকে চিঠিও পাঠিয়েছেন ইন্দ্রনীলবাবু। আবার গত নভেম্বর মাসে কলকাতা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছিল ৭১ বছরের এক বৃদ্ধকে। তাঁরও বাড়ির সন্ধান মেলেনি। পুজোর সময়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন সত্তরোর্ধ্বা এক মহিলা। তাঁর পায়ে ঘা রয়েছে। নথিতে বাড়ির ঠিকানা কোন্নগরের থাকলেও সেখানে পুলিশ গিয়ে কারও খোঁজ পায়নি। আপাতত হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে আলাদা ভাবে থাকা ওই তিন জনই নিজেদের সম্পর্কে বিশদে কিছু বলতে পারছেন না।


মনোরোগ চিকিৎসক তথা ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘সামাজিক ও মানসিক কারণেই আজ আত্মিক বন্ধন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আগে যৌথ পরিবারে সকলের মধ্যে আবেগের বন্ধন ছিল। এখন অণু পরিবারে বাচ্চাদের সামনে কোনও রোল মডেল নেই। তাই বাচ্চাটি বড় হওয়ার পরে তাঁর কাছে বাবা-মা কিংবা বাড়ির বয়স্কেরা বাড়তি বোঝার মতো হয়ে যাচ্ছেন। সেই ভার লাঘব করতে বৃদ্ধাশ্রম কিংবা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন অনেকে। আর তাই ভর্তি করানোর সময়ে ইচ্ছে করে ভুল নম্বর বা ঠিকানা দিচ্ছেন তাঁরা। অন্য দিকে, সমাজের ইঁদুর দৌড়ে অংশ নিয়ে বয়স্কদের খোঁজ রাখার মতো সময়ও তাঁদের কাছে নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement