প্রতীকী ছবি।
এক মনোরোগীর বেধড়ক মারে মৃত্যু হল আর এক মনোরোগীর। বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে পাভলভ হাসপাতালে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল (২২)। গত অক্টোবরে বরাহনগর থানার পুলিশ মানসিক ভাবে অসুস্থ ইন্দ্রজিৎকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে ব্যারাকপুর আদালতে হাজির করিয়েছিল। তার পরে আদালতের নির্দেশেই ইন্দ্রজিৎকে পাভলভে ভর্তি করা হয়।
বুধবারের ওই ঘটনার পরে পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ নম্বর ধারায় (অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো) একটি মামলা রুজু করেছে। শুরু হয়েছে তদন্ত। যে যুবক ইন্দ্রজিৎকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ, তিনি নিজেও মানসিক ভাবে অসুস্থ। ফলে তদন্ত শুরু হলেও তাঁকে আপাতত গ্রেফতার করা হবে না। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে সে ভাবেই চার্জশিট পেশ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কিন্তু এ রকম ঘটনা ঘটল কী করে?পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা, বছর তিরিশের এক যুবককে ২০১৩ সালে আদালতের নির্দেশে পাভলভে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন। পুলিশকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বুধবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিট নাগাদ ওই যুবক ইন্দ্রজিৎকে আক্রমণ করেন এবং একের পর এক ঘুসি মারতে থাকেন। ইন্দ্রজিৎকে ওই ভাবে মারতে দেখে ওয়ার্ডে থাকা নার্স ছুটে আসেন। কিন্তু ওই যুবককে শান্ত করা যায়নি। পরে হাসপাতালের অন্য কর্মীরাও ছুটে আসেন। কিন্তু তত ক্ষণে মারের চোটে নেতিয়ে পড়েছেন ইন্দ্রজিৎ। এর পরে সাড়ে ছ’টা নাগাদ তাঁকে উদ্ধার করে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
হাসপাতালের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, ওই যুবক মোটেও বিনা প্ররোচনায় মারধর শুরু করেননি। বরং ইন্দ্রজিৎই তাঁকে অনেক ক্ষণ ধরে গালিগালাজ করছিলেন। এবং বিষয়টি দেখেও হাসপাতালের কোনও কর্মী বা নার্স ঝামেলা মেটাতে উদ্যোগী হননি। দীর্ঘক্ষণ এ রকম চলার পরেই ওই যুবক ইন্দ্রজিৎকে মারতে শুরু করেন। সেই মারধরও চলে দীর্ঘ সময় ধরে। পরে যখন ইন্দ্রজিৎ একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়েন, তখন তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এর জন্য কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন হাসপাতালের একাংশ। তাঁরা বলছেন, এই মুহূর্তে পাভলভে প্রচুর গ্রুপ ডি কর্মী রয়েছেন। পর্যাপ্ত নার্সও রয়েছেন। তার পরেও কী ভাবে এক জন রোগী অপর জনকে এত ক্ষণ ধরে মারতে পারেন?
এই ঘটনার পরে পুলিশ ও চিকিৎসকদের অনেকে পাভলভের ভিতরে রোগীদের শুশ্রূষা ও তাঁদের রাখার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘ক্রনিক’ রোগী, ‘অ্যাকিউট’ রোগী এবং রোগমুক্তদের একসঙ্গে রাখাটাই অনুচিত। কিন্তু এখানে একসঙ্গে সব রোগীকে রাখা হয়। আর তাতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে হাসপাতালের কর্মীদের একাংশেরও অভিযোগ। তবে মনোরোগের চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম অবশ্য পুরোটাই দুর্ঘটনা বলে মনে করছেন। এ বিষয়ে পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদ বলেন, ‘‘একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পুরোটাই আকস্মিক ভাবে ঘটে গিয়েছে। ওই রোগী কিন্তু খুন করার উদ্দেশ্য নিয়ে মারধর করেননি।’’
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী অবশ্য বিষয়টি জানেন না বলেই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি, কী হয়েছে।’’