প্রতীকী ছবি
লকডাউনে সহকর্মীর স্কুটারে চড়ে কোনও রকমে কাজের জায়গায় পৌঁছচ্ছিলেন তনুশ্রী বসাক। বুধবার থেকে বাসের সংখ্যা বাড়ছে জেনে ভবানীপুরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মী তনুশ্রী স্থির করেন, গড়িয়া থেকে ভবানীপুর বাসেই যাবেন। সেই মতো সকাল সাড়ে ৭টায় বাসের লাইনে প্রায় ৭০ জনের পিছনে দাঁড়ান। তবে বাস পেতে পেতে প্রায় দু’ঘণ্টা! এসপ্লানেডে একটি বেসরকারি অগ্নিসুরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রয় সংস্থার কর্মী সুবোধ মণ্ডল এ দিন সকাল সাড়ে ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়ে বাস পেয়েছেন বেলা ১১টায়।
বাসের অপেক্ষায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে এ ভাবেই এ দিন গলদঘর্ম হয়েছেন অনেকে। আর মাত্র ২০ জন করে যাত্রী নিয়ে সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে একের পর এক সরকারি বাস। সুবোধ বলেন, ‘‘মনে হচ্ছিল, ময়দানে ডার্বি ম্যাচের টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। অথচ বাসে ওঠার পরে দেখলাম ভিতরে প্রচুর জায়গা।’’ এ ভাবে বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় চলে গেলে কী ভাবে প্রতিদিন যাতায়াত করা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
বাসের অপেক্ষায় যাত্রীদের ভিড়ের ছবি এ দিন ছিল গড়িয়া থেকে ডানলপ, টালিগঞ্জ, বেহালা, যাদবপুর থেকে সল্টলেক করুণাময়ী— প্রায় সর্বত্রই। অথচ ওই সব রুটে সাধারণত যে সংখ্যক বাস চলে, তার প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক বাস বরাদ্দ করেছে পরিবহণ নিগম। তবু ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাসের অপেক্ষায় সামাজিক দূরত্ব-বিধিরও বালাই ছিল না বহু জায়গায়। এমনকি বাসে ওঠা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে বচসাও হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিবহণ দফতরের এক অধিকারিক বলছেন, ‘‘ভিড় অনুযায়ী বাসের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু তারও তো সীমা আছে! ২০ জন যাত্রী নিয়ে চলা বাসে মাঝপথ থেকে যাত্রীরাও উঠতে পারছেন না।’’
ভাড়া না বাড়িয়ে ২০ জন যাত্রী নিয়ে সরকারি বাস ছুটলেও পুরোনো ভাড়ায় পথে নামতে রাজি হননি বেসরকারি বাসমালিকেরা। তাঁদের দাবিমতো দ্বিগুণ বা তিন গুণ পর্যন্ত ভাড়া বাড়াতে সরকার রাজি না হওয়ায় এখনও পথে নামেনি বেসরকারি বাস। ফলে লকডাউনের নিয়ম শিথিল হওয়ায় পথে বেরিয়েই বাসের অভাব টের পেয়েছেন যাত্রীরা। এ দিন উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাস পরিষেবা চালু হয়েছে। সেখানে সর্বাধিক ২৫ জন করে যাত্রী এবং তাঁদের সঙ্গে মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে সেখানেও আগামী দিনে যাত্রী-সংখ্যার চাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন: আমপানের তাণ্ডবের সন্ধ্যায় জল ভরেই বাঁচানো হয়েছিল টালা ট্যাঙ্ক! সত্যি না মিথ্যে?
এ দিন কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন রুটে পথে নেমেছে অটোও। তবে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়লে আগামী দিনে বাসের সঙ্কট ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবহণ আধিকারিকদের একাংশ। তাই পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখেই বাসে যাত্রী নেওয়ার ঊর্ধ্বসীমা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। কলকাতায় জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আওতায় থাকা সরকারি বাসে আসন সংখ্যা ৩২ হলেও বহু যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। অন্যান্য বাসে আসন সংখ্যা ৩৮-৪০টি। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসে আসন সংখ্যা ৫০। ফলে উপযুক্ত পরিকল্পনা নিলে বাসে যাত্রী-সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন ওই আধিকারিকেরা।
বেসরকারি বাস সংগঠনগুলিও মনে করছে, যাত্রী-সংখ্যা বাড়ালে বেশি ভাড়াও গুনতে হবে না। ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’-এর সহ-সম্পাদক টিটো সাহা বলেন, ‘‘সার্বিক অর্থনীতির স্বার্থেই পরিবহণ সচল হওয়া জরুরি। তাই বাস্তবোচিত সমাধান খোঁজা প্রয়োজন। আমরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি।’’ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনিবাস অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি’-র যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘যাত্রী তোলার ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর পাশাপাশি, বাসমালিকদের কর এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিলে পরিস্থিতি সহজ হতে পারে।’’ অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় আবার বলেন, ‘‘জেলার বাসে ৫০টিরও বেশি আসন থাকে। তাই ২০ জন যাত্রীতেই আটকে না থেকে সব দিক খতিয়ে সমাধান খোঁজা জরুরি।’’
এ ক্ষেত্রে রেল এবং বিমানে আসন ফাঁকা না-রাখার প্রসঙ্গও তুলছেন অনেকে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত ট্রেন বা বাতানুকূল বিশেষ ট্রেনেও আসন খালি রাখা হচ্ছে না। তাই বাসের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী-ধারণ ক্ষমতার উপযুক্ত ব্যবহার চাইছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: ‘লকডাউন এখনও চলছে নাকি? দেখে মনে হচ্ছে?’