কলকাতা মেট্রো। —ফাইল চিত্র।
ভবিষ্যতে বুকিং কাউন্টারবিহীন মেট্রোর কল্পনায় বিভিন্ন স্টেশনে ডিজিটাল লেনদেন বাড়াতে অস্বাভাবিক জোর দিচ্ছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ। অভিযোগ, ভাঙাচোরা পরিকাঠামো নিয়ে যাত্রীদের ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত করতে গিয়ে নানা ঝক্কি সামলাতে হচ্ছে মেট্রোর কর্মীদের। বিভিন্ন স্টেশনে লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোর অপ্রতুলতার সমস্যা বার বার প্রকট হচ্ছে। ক্ষোভ বাড়ছে যাত্রীদের।
বুকিং কাউন্টারে খুচরো দেওয়ার সমস্যা ঘোচাতে ইউপিআই-নির্ভর পদ্ধতিতে টিকিটের দাম মেটানোর ব্যবস্থা চালু করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তবে, ওই ব্যবস্থায় প্রতিটি টোকেন বা কাগজের টিকিটের জন্য আলাদা করে কিউ আর কোড স্ক্যান করতে হয় বলে অভিযোগ। তাতে কাউন্টারে যাত্রীদের বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। যা নিয়ে অনেকেই বিরক্ত। একাধিক ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনে মোবাইল টাওয়ারের সমস্যা থাকায় ইউপিআই-নির্ভর লেনদেন মাঝপথে থমকে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিনেও কিউআর কোডের মাধ্যমে দাম মিটিয়ে টোকেন কেনা বা স্মার্ট কার্ড রিচার্জ করা যাচ্ছে। কিন্তু, সে ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। অভিযোগ, একত্রে সফর করছেন, এমন একাধিক যাত্রীর জন্য টোকেনের দাম মেটাতে গিয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে।
মেট্রোর নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে যাঁরা কিউআর কোডের সাহায্যে টিকিট কাটছেন, প্রবেশপথে তাঁদের নির্দিষ্ট কোড স্ক্যান করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর বেশির ভাগ স্বয়ংক্রিয় গেট পুরনো। ওই সব গেটের একাধিক যন্ত্রাংশ প্রায়ই বিকল হয়। বহু ক্ষেত্রেই জোড়াতালি দিয়ে সে সব মেরামত হয়। সেখানে স্ক্যানার ঠিক মতো কাজ না করায় সমস্যা হয়।
যাঁরা মেট্রোর বুকিং কাউন্টার থেকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে স্মার্ট কার্ড রিচার্জ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রায় ১.৮ শতাংশের মতো টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয়। যা ব্যবহারকারীর কার্ডের বিলে জুড়ে যায়। বেশ কয়েকটি মেট্রো স্টেশনে কার্ডের ব্যালান্স পরীক্ষার যন্ত্র ঠিক না থাকায় অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড রিচার্জের পরে তা বৈধ করতেও অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
মেট্রোকর্তাদের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘সেন্টার ফর রেলওয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম’ (ক্রিস) সংস্থার সহযোগিতায় তাঁরা পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ডিজিটাল লেনদেনে টিকিট বিক্রিও বাড়ছে। অতীতের একাধিক সমস্যা এখন নেই বলে দাবি কর্তাদের।
মেট্রোর কর্মী সংগঠন অবশ্য অপ্রতুল পরিকাঠামো নিয়ে ডিজিটাল লেনদেন চাপানোর সমালোচনায় মুখর। মেট্রোর প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রযুক্তি উন্নত হলে মানুষই তা গ্রহণ করবেন। কর্মীদের ব্যবহার করে পাঠশালা চালানোর প্রয়োজন পড়বে না।’’