চাহিদার তুলনায় অ্যাপ-ক্যাবের সংখ্যা কম থাকায় এ দিন অন্যান্য দিনের তুলনায় প্রায় দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের। ফাইল ছবি
ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাবের ধর্মঘটের জেরে সোমবার দিনভর চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হল যাত্রীদের। হাওড়া এবং শিয়ালদহের মতো ব্যস্ত স্টেশন ছাড়াও এ দিন কলকাতা বিমানবন্দর, এসপ্লানেড, বড়বাজার, পিজি হাসপাতাল, কালীঘাট, টালিগঞ্জ, বাইপাস সংলগ্ন একাধিক হাসপাতাল এলাকায় অ্যাপ-ক্যাব এবং হলুদ ট্যাক্সি পেতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয়েছে যাত্রীদের।
সকাল থেকেই চাহিদার তুলনায় অ্যাপ-ক্যাবের সংখ্যা কম থাকায় এ দিন অন্যান্য দিনের তুলনায় প্রায় দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের। এমনকি দুপুরের দিকে চাহিদা কিছুটা কমে আসার পরেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে হলুদ ট্যাক্সির ভাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই আন্দোলনে নেমেছে বামপন্থী সংগঠন ট্যাক্সি অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশেন কমিটি। এআইটিইউসি অনুমোদিত ওই ট্যাক্সিচালক সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে রাজ্য সরকারকে এর আগে একাধিক বার চিঠি দেওয়া হলেও সরকারের তরফে সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। তার পরেই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নওলকিশোর শ্রীবাস্তবের।
এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ একটি দূরপাল্লার ট্রেন থেকে হাওড়া স্টেশনে নামেন ধনঞ্জয় প্রধান। হাওড়া থেকে ই এম বাইপাস সংলগ্ন ভিআইপি বাজারে যাওয়ার জন্য একটি সংস্থার অ্যাপ-ক্যাবে তাঁকে দিতে হয় ৬৮৭ টাকা। একটি পরামর্শদাতা সংস্থার আধিকারিক স্বর্ণেন্দু সিংহ এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ নাকতলা থেকে বিমানবন্দর যাচ্ছিলেন। তাঁকে ওই দূরত্বের জন্য ৮৯৩ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। সকাল ১১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে সোনারপুরের ভাড়া দেখিয়েছে ৬৬৭ টাকা। দুপুর ২টো নাগাদ রাসবিহারী মোড় থেকে বেহালা চৌরাস্তাগামী এক যাত্রীকে ভাড়া দিতে হয়েছে ৩৭৭ টাকা। একই সময়ে রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশন থেকে সাঁতরাগাছি যাওয়ার ক্ষেত্রে ভাড়া লেগেছে ৩০৭ টাকার কাছাকাছি। কসবার বাসিন্দা মৌমিতা সরকার শরৎ বসু রোডে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য দিন যেখানে ১৩০ টাকায় হয়ে যায়, আজ সেই রাস্তা আসতেই ২৭৭ টাকা দিতে হয়েছে। ’’
এমনকি দুপুরের দিকে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে একটি অ্যাপ – ক্যাব সংস্থা চালকদের বিশেষ ইনসেন্টিভ বা উৎসাহভাতা দেওয়ার কথাও জানায়। তবে তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
হাওড়া, শিয়ালদহ, সাঁতরাগাছি এবং কলকাতা স্টেশনে এসে পৌঁছনো যাত্রীরা কেউই মিটারে ট্যাক্সি পাননি। বেশি টাকা দিয়ে প্রিপেড ট্যাক্সি নিতে হয় অনেককেই। অনেকে বেশি ভাড়ায় আগাম রফা করে বাড়িমুখো হন।
ধর্মঘট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এআইটিইউসি ট্যাক্সি সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘লিটারে ডিজেলের দাম এসে ঠেকেছে ৮৪ টাকায়। চালকদের বাড়িতে হাঁড়ি না চড়ার উপক্রম হয়েছে। কিন্ত সরকার সমস্যার কথা জেনেও নীরব। বাধ্য হয়েই ধর্মঘট ডাকতে হয়েছে।’’
এ দিন ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে দুপুর ১টা নাগাদ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল বের করা হয়। পুলিশ আইন অমান্য করার দায়ে ৩৩ জনকে আটক করে। পরে ধৃতেরা জামিন নিতে অস্বীকার করলে তাঁদের সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ নিঃশর্তে মুক্তি দেওয়া হয়।