ফাইল চিত্র।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্য প্রশাসনের চালু করা বিধিনিষেধ মেনে মেট্রো পরিষেবা শুরু হওয়ার প্রথম দিনেই একের পর এক বিভ্রাটে সকাল থেকে বিকেল বিপর্যস্ত হল পরিষেবা। বেলা সাড়ে ১২টায় সমস্যা শুরু হওয়ার পরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ, সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ের ঠিক আগে পরিষেবা স্বাভাবিক হয়। এর জেরে দিনভর জেরবার হন অসংখ্য যাত্রী।
সোমবার সকালে মেট্রো স্বাভাবিক ভাবে চললেও অফিসের সময়ে ভিড় কম ছিল না। সকাল সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে অধিকাংশ ট্রেনেই ৫০ শতাংশের অনেক বেশি যাত্রী সফর করেছেন। প্রায় সব ট্রেনেই সব আসন ভরে যাওয়ার পরে কামরায় যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। সন্ধ্যায় এই ভিড়ের চিত্র দেখা গিয়েছে রাত প্রায় আটটা পর্যন্ত।
৫০ শতাংশ যাত্রী নিশ্চিত করা হবে কী ভাবে, তা নিয়ে এক দিকে টানাপড়েন এবং অন্য দিকে ভিড়, এই দুইয়ের সঙ্গে এ দিন পরিস্থিতি জটিল করে তোলে পর পর মেট্রো-বিভ্রাট। মেট্রো সূত্রের খবর, বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বরাহনগর স্টেশনের আপ প্ল্যাটফর্মে একটি এসি রেকের মোটরে আচমকা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেটি বিকল হয়ে পড়ে। এর ফলে আরও একটি ট্রেন আপ লাইনে ওই রেকটির পিছনে দাঁড়িয়ে পড়ে। পরে বিকল রেকটিকে নোয়াপাড়ায় ফিরিয়ে এনে ১২টা ৫৩ মিনিট নাগাদ ডাউন লাইন দিয়ে ওই স্টেশন থেকে পরিষেবা চালু করার চেষ্টা করা হয়। ওই সমস্যা মিটতে না মিটতেই প্রায় একই সময়ে শোভাবাজার স্টেশনে ডাউন প্ল্যাটফর্মে আটকে পড়ে আর একটি মেট্রো। থার্ড কারেন্ট কালেক্টরে (টিআরসিসি) সমস্যার কারণে সেটিতে বিপত্তি দেখা দেয়। কোনও মতে স্টেশনে নিয়ে আসার পরে ওয়াই সাইডিংয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু, ট্রেনটিকে নড়ানো যায়নি। ফলে এক দিকে বরাহনগরে বিপত্তি, অন্য দিকে গিরিশ পার্কে মেট্রো দাঁড়িয়ে থাকা— এই দুইয়ের জেরে উত্তরের পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে।
বিভ্রাট পিছু ছাড়েনি দক্ষিণেও। রবীন্দ্র সদন এবং ময়দান স্টেশনের মাঝে আপ লাইনে থার্ড রেলে স্ফুলিঙ্গ দেখতে পাওয়ায় ওই অংশে ধীর গতিতে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুপুর ১টা ২৪ মিনিট থেকে পরিষেবা শুরু হয় ময়দান এবং কবি সুভাষের মধ্যে। ইতিমধ্যে বরাহনগরে বিকল হওয়া রেকটি সরিয়ে নিয়ে যেতে পারায় দুপুর ২টো ২৩ নাগাদ দমদম থেকে দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু তখনও পুরো পথে পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায়নি।
মধ্য কলকাতার একাধিক মেট্রো স্টেশনে পরিষেবা না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন অসংখ্য যাত্রী। শেষমেশ বিকেল ৫টা নাগাদ গিরিশ পার্ক স্টেশনে আটকে থাকা ট্রেনটি সরানো সম্ভব হওয়ায় গোটা মেট্রো পথে পরিষেবা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। যাবতীয় বিভ্রাটের মধ্যেই এ দিন রবীন্দ্র সদন স্টেশন থেকে এক যাত্রীকে টোকেন দিয়ে ফেলেন কাউন্টারের এক কর্মী। ওই যাত্রী সেই টোকেন নিয়ে রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনে পৌঁছেও যান। তা দেখে মেট্রোকর্মীদের মধ্যে হুলস্থুল পড়ে যায়।
পর পর বিভ্রাটে মেট্রো পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার প্রসঙ্গে সংস্থার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, ‘‘বরাহনগর ও শোভাবাজারে যান্ত্রিক বিভ্রাটের জন্য দুপুরে কয়েক ঘণ্টা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। তবে দ্রুত বিকেলের মধ্যেই পুরো পথে পরিষেবা চালু করা গিয়েছে।’’