জলমগ্ন বিমানবন্দর। ছবি: সৌভিক দে।
মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে কোনওমতে পৌঁছনো গিয়েছিল বিমানবন্দরে। তত ক্ষণে বিমান ছাড়ার সময় পেরিয়ে গিয়েছে।
শনিবারের বৃষ্টি-বিধ্বস্ত শহরে ভোগান্তির শুরুটা ছিল এমনই। সাত-সকালে যশোহর রোড ও ভিআইপি রোডে ঠাসাঠাসি যানজটের ছবিটাই বুঝিয়ে দিল যাত্রীদের যন্ত্রণা।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দেশের মধ্যে উড়ানের ক্ষেত্রে বিমান ছাড়ার ৪৫ মিনিট আগে বোর্ডিং কাউন্টার বন্ধ করা হয়। আন্তর্জাতিক উড়ানে সেই সময়সীমা তিন ঘণ্টা। দুর্যোগের বহর দেখে সকালের উড়ানগুলির জন্য বাড়তি সময় কাউন্টার খোলা রেখেছিল বেশির ভাগ বিমানসংস্থা। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। দুর্যোগের দিনে, সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছতে যাত্রীরা হিমশিম খেয়েছেন। পড়ি-মরি করে গিয়েও বন্ধ কাউন্টারের সামনে হাত কামড়াতে হয়েছে অনেককে। এ দিন সকালের এক-একটি বিমানে গড়ে তিন থেকে পাঁচ জন যাত্রী উড়ান ধরতে পারেননি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁদের অনেককেই পরবর্তী বিমানে রওনা করিয়েছেন বিমানসংস্থাগুলি।
নদীর আকার নিয়েছে বিমানবন্দর।
বিমানসংস্থাগুলির দাবি, সকাল সওয়া ছ’টায় যে কাউন্টার বন্ধ হওয়ার কথা তা সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত খোলা ছিল। তাতে কেউ কেউ উড়ান ধরতে পেরেছেন। বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, ‘‘ওই বাড়তি সময়ে গড়ে ১০-১২ জন যাত্রী এসে ‘বোর্ডিং পাস’ নিয়েছেন।’’
নিত্যযাত্রীদের অভিজ্ঞতা বলছে, যাত্রীদের এই হয়রানির পিছনে যশোহর রোডের বেহাল দশাও দায়ী। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় প্রবল বৃষ্টির তোড়ে কয়েক পা অন্তর ছোট-মেজ ডোবার আদল পেয়েছিল। যার অনিবার্য পরিণাম, অস্বাভাবিক যানজট। বাস্তবিক, শুক্রবার রাত থেকেই ভোগান্তির শুরু হয়েছে। রাত ১২টাতেই বিমানবন্দরের এক নম্বর গেট থেকে গাড়ির সারি কার্যত নিশ্চল হয়ে পড়ে তেঘরিয়া ও নাগেরবাজার মোড় পর্যন্ত। নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা এক যুবক অফিস থেকে ফেরার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বললেন, ‘‘লাগার কথার তিন থেকে পাঁচ মিনিট। কিন্তু শুক্রবার রাতে তেঘরিয়া থেকে এক নম্বর গেট যেতে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে।’’
শনিবার ভোরেও ওই তল্লাটে যানজট কমেনি। ফলে তখনও ভিআইপি রোড ধরে বিমানবন্দর যাওয়াও কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বেলা একটু গড়ানোর পরে অবশ্য যাত্রীরা শহরের নদী হয়ে ওঠা রাজপথে খানিকটা ধাতস্থ হয়ে ওঠেন। তাই একটু বেলার দিকে উড়ান ‘মিস’ করার ঘটনা ছিল কম। ক্রমশ টিভি-এফএম চ্যানেলে বা ফোনে শহরের পরিস্থিতির কথা জানতে পেরে লোকে হাতে বাড়তি সময় নিয়ে রওনা দিয়েছেন বিমানবন্দরের উদ্দেশে ।
বিমানবন্দরের ভিতরের অবস্থাও কহতব্য নয়। ছাউনি-ঢাকা হ্যাঙার— যেখানে বিমান রেখে যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা হয়, সেখানেও জল থই-থই। জল জমেছে বিমান দাঁড়ানোর জায়গাতেও। টার্মিনালে ছাদের ফুটো থেকে জল ঝরেই চলেছে। মেঝে বাঁচাতে ব্যাগপত্র রাখার ট্রে বসানো জায়গায় জায়গায়।