ফাইল চিত্র।
শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ডের বাগবাজার বিটে ডিউটি করার সময়ে হলুদ নম্বর প্লেটের একটি সাদা গাড়ি আটকেছিলেন ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। গাড়ির যাত্রী দাবি করেন, ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছেন। কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে ওই যাত্রী যে প্রেসক্রিপশন দেখান, সেটি পুরনো। সন্দেহ হওয়ায় এর পরে সরাসরি প্রেসক্রিপশনে লেখা চিকিৎসকের নম্বরে ফোন করেন পুলিশকর্মী। জানা যায়, রোগীকে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল গত মার্চে লকডাউন শুরুরও আগে! অতঃপর গাড়িটিকে আটক করার পাশাপাশি চালক-সহ গ্রেফতার হন দুই যাত্রী।
বৃহস্পতিবার লকডাউন এতটাই কড়া হাতে সামলাল পুলিশ। শহরের নানা প্রান্তে এ দিন রাত পর্যন্ত বিধিভঙ্গের অপরাধে ৭৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। মাস্ক না পরার অভিযোগে ৩৮৭ এবং প্রকাশ্যে থুতু ফেলার জন্য ৬৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিধিভঙ্গের অপরাধে আটক করা হয় ২৭টি গাড়ি। পুলিশের দাবি, বিগত লকডাউনগুলিতে দেখা গিয়েছে, অযথা ঘোরাঘুরি, পুলিশের নাকা পেরিয়ে পালানোর চেষ্টা এমনকি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অজুহাতে লোকজন বেরিয়েছেন।
বাগবাজার বিটে কর্তব্যরত ওই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বলেন, “অনেকেই পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখান। এ দিন সরাসরি চিকিৎসককে ফোন করব ঠিক করে রেখেছিলাম। হাতে-নাতে ধরা পড়েছে। কেউ সত্যিই অসুস্থ হলে দেখে বোঝা যায়।”
আরও পড়ুন: কুর্নিশ জানাতে ইচ্ছে করে জীবনযুদ্ধের সৈন্যদের
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এই কড়াকড়ির কারণেই এ দিন অন্য লকডাউনের তুলনায় রাস্তায় লোকের সংখ্যা কম ছিল। তবে তাঁদের এমনও দাবি, বৃষ্টির কারণেও পুলিশের কাজে সুবিধা হয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই কার্যত শুনশান ছিল উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার সব ক’টি বড় রাস্তা। ছুটির মেজাজই চোখে পড়ল ধর্মতলা বা হাতিবাগানে।
যদিও এ দিন শহরের বেশ কিছু বাজারে ভিড় দেখা গিয়েছে সন্ধ্যার পরে। যদুবাবুর বাজার এবং মানিকতলা বাজারের মতো অনেক জায়গাতেই দিনভর দোকানের শাটার নামানো থাকলেও ভিতরে দেদার তাসের আড্ডা চলেছে বলে অভিযোগ। সন্ধ্যার পরে মুচিবাজারে হাজির একদল ক্রেতা বললেন, “আমাদের পাড়ার গণেশ পুজোর বাজার করতেই এসেছি। করোনা আর নেই।” পাশে দাঁড়ানো এক ব্যক্তির দাবি, “লকডাউন শুধু বড় রাস্তায়। গলির আড্ডা সব সময়ই আছে!”
আরও পড়ুন: বিধি পালনের সঙ্গে লঙ্ঘনের ছবিও দেখলেন পরিদর্শকেরা
আবার অভিযোগ উঠেছে কাগজপত্র দেখানো সত্ত্বেও মহাত্মা গাঁধী রোডে স্টক এক্সচেঞ্জের গাড়ি আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জের আধিকারিক শঙ্করলাল সিংহ বলেন, ‘‘লকডাউনে কড়াকড়ি খুব ভাল। কিন্তু কাগজপত্র দেখানো সত্ত্বেও তা দেখতে চায়নি পুলিশ। পরে অবশ্য পুলিশ ছেড়ে দেয়।’’
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘যাঁকে প্রয়োজন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এটা স্বাভাবিক।’’