বিপজ্জনক বাড়ি। —ফাইল চিত্র।
বর্ষার মরসুমে প্রতি বছরই কলকাতা শহরে একাধিক জীর্ণ বাড়ি ভেঙে পড়ে। কলকাতা পুরসভা এই ধরনের বাড়ির গায়ে ‘বিপজ্জনক’ নোটিস ঝুলিয়ে দেয় বটে, কিন্তু সংস্কারের কাজ প্রায় হয়ই না। তার জন্য বাড়ির মালিকের সঙ্গে ভাড়াটেদের দ্বন্দ্বকেই প্রধান কারণ হিসাবে অধিকাংশ সময়ে চিহ্নিত করেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ বার পুর কমিশনারকে লেখা চিঠিতে পুরসভার বিরুদ্ধেই বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছে বাড়িমালিকদের একটি সংগঠন।
‘ক্যালকাটা হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রক্ষিত সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমারকে লেখা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ‘কম ভাড়ার পুরনো বাড়িগুলিতে পুরসভার পক্ষ থেকে বিপজ্জনক বাড়ির নোটিস টাঙানো হয়। কিন্তু সেখানে ব্যবসা বা দোকান বন্ধ করার কোনও চেষ্টা পুর কর্তৃপক্ষ করেন না। সেই সমস্ত দোকান বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বছরের পর বছর নবীকরণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জল, নিকাশি ও বিদ্যুতের সংযোগও অব্যাহত থাকছে। পুর কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যকর আদায়েও পিছপা হচ্ছেন না। অর্থাৎ, এক দিকে ওই সমস্ত ‘বিপজ্জনক’ বাড়িতে বসবাস করতে বারণ করা হচ্ছে, আবার অন্য দিকে সমস্ত পরিষেবা বহাল রেখে নিজেদের সিদ্ধান্তকেই হাস্যকর প্রতিপন্ন করছে পুরসভা।’ পুর কমিশনারকে লেখা ওই চিঠিতে অবিলম্বে বিপজ্জনক বাড়িগুলির সমস্ত পরিষেবা বন্ধ করে বাসিন্দাদের সরে যেতে বাধ্য করার আবেদন জানিয়েছে ওই বাড়িমালিক সংগঠন।
কলকাতা পুরসভা এলাকায় এই মুহূর্তে তিন হাজারেরও বেশি বিপজ্জনক বাড়ি এবং একশোরও বেশি অতি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর কলকাতায় বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা বেশি। অথচ, সেই সব বাড়িতেই বছরের পর বছর বসবাস করে যাচ্ছেন ভাড়াটেরা। উত্তর কলকাতার বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাড়ির ভাড়াটেরা জানাচ্ছেন, বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকার কারণেই বিপজ্জনক জেনেও সেই বাড়ি ছেড়ে সরতে চান না তাঁরা।
পঞ্চমীর রাতে বড়বাজারের রবীন্দ্র সরণির একটি বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল দুই পথচারীর। তার পরেও সেই বাড়িতেই বাস করছেন ভাড়াটেরা। কেন? তাঁদের জবাব, ‘‘এখান থেকে কোথায় যাব? আমাদের কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই।’’ শহরের সর্বত্র বিপজ্জনক বাড়িতে বসবাসকারী ভাড়াটেরা একই কারণ দেখিয়ে থাকেন। কোথাও আবার বাড়ি সংস্কার না হওয়ার পিছনে মালিক ও ভাড়াটেরা একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপান।
এই পরিস্থিতিতে সুকুমারবাবুর অভিযোগ, ‘‘১৯৫৬ সালের পুরনো বাড়ি ভাড়া আইনে ন্যায্য ভাড়া বা বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। ক্ষুব্ধ বাড়িমালিকদের দীর্ঘ আন্দোলনের পরে ১৯৯৭ সালে নতুন বাড়ি ভাড়া আইন কার্যকর হলেও তা ত্রুটিপূর্ণ। বেশির ভাগ বাড়িমালিক মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত। বেশির ভাগ পুরনো ভাড়টেরা আজও মাসে মাত্র ৩০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া দেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাড়াটেরা সেই ভাড়া জমা দেন রেন্ট কন্ট্রোলারের দফতরে। সেখান থেকে টাকা পেতেও নাস্তানাবুদ হতে হয় মালিকদের।’’ তাই তাঁদের আবেদন, বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি পুরনো বাড়ি সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারি তরফে গৃহঋণের সুবিধা দেওয়া হোক।
এ নিয়ে কলকাতা পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘বাড়িমালিক সংগঠনের চিঠি পেয়েছি। পুজোর ছুটির পরে ওই সংগঠনের প্রতিনিধিদের ডেকে কথা বলব।’’ কিন্তু বিপজ্জনক বাড়িগুলিতে ট্রেড লাইসেন্সের অনুমোদন কেন দিচ্ছে পুরসভা? এই প্রশ্নের উত্তরে কোনও মন্তব্য অবশ্য করতে চাননি পুর কমিশনার।