Dengue

নামেই নিষিদ্ধ, ডেঙ্গির মরসুমে ভয় ধরাচ্ছে শহরের কুয়ো-চিত্র

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, গত কয়েক সপ্তাহে কুয়ো নিয়ে অভিযোগ এসেছে বিস্তর। বিশেষ করে, দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতায় ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের জন্য অনেকেই আঙুল তুলেছেন খোলা কুয়োর দিকে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২২ ০৭:০১
Share:

বেআইনি: মানিকতলার একটি বাড়িতে এখনও রয়েছে কুয়ো। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

কলকাতায় আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও এ শহরে বন্ধ হয় না পাড়ায় পাড়ায় থেকে যাওয়া পাতকুয়ো। তাতে পড়ে কারও মৃত্যু হলে কয়েক দিন আলোচনা হয়। তার পরে যে কে সে-ই! অভিযোগ, এই মুহূর্তে শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়লেও কুয়ো নিয়ে হুঁশ নেই পুর প্রশাসনের। অথচ, এমন বহু কুয়োয় মশার লার্ভা গিজগিজ করছে বলে অভিযোগ ওঠে। বেশ কয়েকটি আবার জমা জলের সঙ্গেই হয়ে উঠেছে ময়লা ফেলার জায়গাও।

Advertisement

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, গত কয়েক সপ্তাহে কুয়ো নিয়ে অভিযোগ এসেছে বিস্তর। বিশেষ করে, দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতায় ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের জন্য অনেকেই আঙুল তুলেছেন খোলা কুয়োর দিকে। এমনই একটি অভিযোগ করেছিলেন সন্তোষপুরের বাসিন্দা রণজিৎ শূর। ওই ব্যক্তির দাবি, তাঁর ৩০ বছরের মেয়ের হঠাৎ ডেঙ্গি ধরা পড়ে। এলগিন রোডের একটি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। তাঁর নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। রণজিৎদের বাড়ির পাশের বাড়িতেই একটি খোলা কুয়ো রয়েছে। কিন্তু বার বার বলেও সেটি বন্ধ করানো যায়নি বলে অভিযোগ। সেই কুয়োর জল না পরীক্ষা করানো হয়, না স্থানীয় পুর প্রতিনিধির অফিস থেকে সেটি বন্ধ করতে বলা হয়। রণজিতের দাবি, ‘‘পুরসভায় বেশ কয়েক বার চিঠি দিয়েও লাভ হয়নি। ওই বাড়িতে পুরসভার জলের লাইন রয়েছে। তার পরেও কুয়ো থাকে কী করে! ওই কুয়ো নাকি শুধুমাত্র ধর্মীয় আচারের জন্য রয়েছে। পুরসভা কুয়োয় গাপ্পি মাছ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েই খালাস হয়।’’

শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে কুয়োর এমনই চিত্র। মানিকতলার একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে প্রায় ১৬টি পরিবারের বাস। বাড়ির মাঝেই উঠোনে একটি কুয়ো। তাতে গিজগিজ করছে মশার লার্ভা। এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘এই কুয়ো আগে আরও বড় ছিল। ঘর তৈরি করতে খানিকটা বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ বাড়িতে তো পুরসভার জল আসে। তা সত্ত্বেও কুয়ো কেন? এক মহিলা বললেন, ‘‘গ্রীষ্মে এই জল খুব ঠান্ডা থাকে। তবে এখন সে ভাবে ব্যবহার হয় না বলে কুয়োটা পড়েই আছে।’’

Advertisement

একই রকম দাবি কলেজ স্ট্রিটের একটি বাড়ির বাসিন্দাদের। সেখানেও ১০ ঘর ভাড়াটের জন্য এখনও রয়েছে কুয়ো। তলানিতে পড়ে থাকা জলে মশার লার্ভা দেখা যায়। উপরে পাতা রয়েছে একটি জাল। কুয়োর জলেই দিনের উচ্ছিষ্ট ফেলেন বাসিন্দারা। বাড়িওয়ালা শক্তিপদ ঘোষ বললেন, ‘‘পুরসভা বলেছে, ৫০০ টাকা জরিমানা করবে। তবে এখনও করেনি। কয়েক পুরুষের কুয়ো, যত দিন থাকে থাক।’’

হাজরা এলাকার একটি বাড়ির বাসিন্দা আবার জানালেন, তাঁদের ওই বাড়ির চেয়েও বড় কুয়ো রয়েছে পর্ণশ্রীর বাড়িতে। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িওয়ালা মারা গিয়েছেন। সেখানে কুয়ো ব্যবহারও হয় না। বন্ধ করারও কেউ নেই। পুরসভার সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলা চলে ভাড়াটেদের।’’

এমন খেলা বন্ধ হবে কবে? মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার বললেন, ‘‘কুয়ো থাকারই কথা নয়। তেমন কুয়ো আছে বলে মনেও হয় না। কুয়ো থেকে জল তোলার জন্য কলকাতায় যতটা মাটি খুঁড়তে হবে, তাতে মাটি ধসে যাবে।’’ মেয়র পারিষদ (বস্তি উন্নয়ন) স্বপন সমাদ্দারের আবার বক্তব্য, ‘‘আমি নিজেই তো কুয়োর জল ব্যবহার করি। বহু জায়গাতেই কুয়ো এখনও কাজে লাগে। যে কুয়োর জল ব্যবহার হয়, সেখানে ডেঙ্গির মশা জন্মানোর কথা নয়। আর অব্যবহৃত কুয়োর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুরসভার নির্দিষ্ট দল আছে। তারা মাঝেমধ্যেই অভিযানে যায়।’’ কিন্তু অভিযানে কাজের কাজ হয় কি? বাস্তব চিত্র অবশ্য অন্য কথাই বলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement