দলের মুখপত্রে বিজ্ঞাপন নিয়ে অস্বস্তিতে সিপিএম। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
নতুন বিতর্ক কলকাতা সিপিএমের অন্দরে। বিতর্কের কেন্দ্রে সদ্যবহিষ্কৃত নেতার নামে দলের মুখপত্রে প্রকাশিত পর পর দু’দিনের বিজ্ঞাপন। যা নিয়ে নয়া চাপে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। রবিবার সকাল থেকেই বিতর্ক দানা বাঁধছিল। সোমবার তা আরও বেড়েছে। কলকাতা জেলা সিপিএমের অনেকেই এ ব্যাপারে রাজ্য কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণের কথা ভাবছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। তাঁদের মধ্যে জেলা কমিটির একাধিক নেতাও রয়েছেন।
কোন ঘটনা নিয়ে বিতর্ক?
টালিগঞ্জের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তহবিল তছরুপে দলের দুই নেতার ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ে রাজ্য কমিটিতে। তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য এবং রাজ্য কমিটির সদস্য মেঘলাল শেঠকে নিয়ে তদন্ত কমিশন তৈরি করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেই কমিশন তদন্ত করে প্রথমে দুই নেতাকে ছ’মাসের জন্য সাসপেন্ড করার সুপারিশ করে। সুপারিশ মেনে নেয় রাজ্য কমিটি। এর পাশাপাশি দুই নেতাকে নির্দেশ দেওয়া হয় ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে। তার জন্য এক মাসের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল টালিগঞ্জ ও বেহালা পূর্বের দুই নেতাকে। অভিযুক্তদের এক জন, দলের একটি এরিয়া কমিটির সম্পাদক পদে ছিলেন। তাঁকে সেই পদও ছাড়তে বলা হয়।
কিন্তু নির্দেশ সত্ত্বেও কলেজের ‘মায়া’ ত্যাগ করেননি দু’জনের কেউই। আবার দলের পদও ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত গত জুন মাসের গোড়ায় সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটি দু’জনকেই দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। তা অনুমোদন করে রাজ্য কমিটিও। সিপিএমের নিয়ম অনুযায়ী, কাউকে বহিষ্কার করলে দলের মুখপত্রে তা প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ করে দেওয়া হয় দলের গঠনতন্ত্রের ধারাও। অথবা তিনি যে এলাকায় দলের সদস্য, সেই এলাকার দলীয় সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভা করে তা ঘোষণা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৭ অগস্ট) বিজয়গড়ের কুলেন্দু সোম ভবনে সাধারণ সভা করে সিপিএমের কলকাতা জেলার সম্পাদক কল্লোল মজুমদার ঘোষণা করেন, টালিগঞ্জের একদা দাপুটে নেতাকে দল বহিষ্কার করেছে। সিপিএম সূত্রে খবর, এই জোড়া বহিষ্কারের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের ১৯ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারার ‘চ’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
কিন্তু তার ঠিক দু’দিন পরে রবিবার, রাজ্য সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রের প্রথম পাতায় ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একটি সেমিনারের বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। তাতে ওই বহিষ্কৃত নেতার নামও রয়েছে। সোমবার শেষ পাতাতেও একই বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। এই নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে দলে। অনেকের মতে এটা অনৈতিক। এক নেতার কথায়, ‘‘আর্থিক অনটন রয়েছে। তাই বলে বহিষ্কারের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই বিজ্ঞাপন?’’ অনেকে বলছেন, তা হলে কি বহিষ্কৃত নেতার অনুগামীদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হল? সিপিএম কেন্দ্রীয় কিমিটির সদস্য রবীন দেবের কাছে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর বিজ্ঞাপন ছাপার পরেও অনেক কর্মী-সমর্থকের রাগ হয়েছিল। কিন্তু খবরের কাগজ কি ও ভাবে বাছবিচার করতে পারে?’’
অনেকের কাছেই এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য লাগছে না। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘সরকারি বিজ্ঞাপন আর সদ্য বহিষ্কৃত নেতার বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিজ্ঞাপন কি এক হল?’’ সব মিলিয়ে দলের কলকাতা জেলা সংগঠনে তো বটেই, তার বাইরেও এই অভ্যন্তরীণ বিতর্কের রেশ পড়েছে।