Accident

Rash driving: পুলিশকে পিষে দিয়েও লাগামহীন বেপরোয়া লরি

এই রাস্তাতেই বৃহস্পতিবার রাতে এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে পিষে মেরেছে বেপরোয়া লরি!

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৪৬
Share:

মহাত্মা গান্ধী রোডে এখানেই ঘটেছিল দুর্ঘটনা। শুক্রবার রাতে সেখানেই দেখা গেল, লাল সিগন্যাল

তিন দিক ফাঁকা। শুধু এক দিকের রাস্তার পাশে রয়েছে কিছু গার্ডরেল আর ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে চেয়ার পেতে বসে থাকা জোড়াসাঁকো থানার দুই পুলিশকর্মী। শুক্রবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ তাঁরাই নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং মহাত্মা গান্ধী
রোডের সংযোগস্থলের চার মাথার মোড়ে। এই রাস্তাতেই বৃহস্পতিবার রাতে এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে পিষে মেরেছে বেপরোয়া লরি! গাড়ি ধরে পরীক্ষা করা বা ওভারলোডিং দেখে থামতে বলার ব্যবস্থা না থাকার সুযোগেই সেখান দিয়ে একের পর এক বেপরোয়া লরি ছুটছে সিগন্যাল ভেঙে। গার্ডরেল পাতা রয়েছে দেখেও পরোয়া নেই চালকদের।

Advertisement

এত ফাঁকা? প্রশ্ন করতেই সেখানকার এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘রাত সাড়ে ১১টার পরে ট্র্যাফিক পুলিশ রাস্তা থেকে উঠে গিয়েছে। থানার উপরে ভার এখন। করোনার এমন দাপট যে থানারও এক-দু’জনের বেশি লোক নেই। তাই এই দু’জনই আছি। কিন্তু সাবধানে কাজ করছি। প্রাণটা আগে। গত কাল যা
হয়েছে, তার পরে আর কিছু বলার নেই। তাড়া করে ধরতে গেলে নিজেরই বিপদ। এই সমস্ত লরিকে কে শেখাবে!’’

এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শুক্রবার রাতে ঘুরে দেখা গেল,শহরের বেশির ভাগ রাস্তাতেই একই অবস্থা। প্রায় সমস্ত বড় মোড়েই যে কয়েক জন পুলিশকর্মীকে দেখা গিয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও লালবাজারের নির্দেশ মেনে উজ্জ্বল জ্যাকেট পরা বা কাঁধে
উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে রাখার বিষয়টি চোখে পড়েনি। প্রশ্ন করলে তাঁরা শুধু বলেছেন, ‘‘কাঁধে আলো লাগানো আছে। কিন্তু জ্যাকেটে ঢাকা পড়ে গিয়েছে।’’ এর মধ্যেই দেখা গেল, কোথাও একাধিক লরি দ্রুত লেন বদলে গতির প্রতিযোগিতায় নেমেছে, কোথাও আবার সিগন্যাল
ভেঙে লরি ঢুকে পড়ছে যেমন খুশি। ক্ষমতার চেয়ে বেশি ভার বহনকারী একাধিক লরির ক্ষেত্রে আবার দেখা গেল, নিয়ন্ত্রণই ধরে রাখতে পারছেন না চালক।

Advertisement

রাত দেড়টা নাগাদ এমনই একটি লরি সরাসরি গিয়ে পড়ে ই এম বাইপাসের এক ভেড়িতে। কারও প্রাণহানি না ঘটলেও ক্রেনে করে শেষ পর্যন্ত লরিটিকে তুলতে হয়। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিট এবং জওহরলাল নেহরু রোডের সংযোগস্থলে আবার একটি লরি সরাসরি ধাক্কা মারে অনলাইনে খাবার আনানোর একটি সংস্থার মোটরবাইকে। কোনও মতে বেঁচে যান মোটরবাইকের চালক। সামনে সিগন্যাল লাল হয়েছে
দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু ক্ষমতার চেয়ে বেশি জিনিসপত্র চাপানো লরিটির গতি এতই বেশি ছিল যে, জোরে ব্রেক কষেও
চালক সেটি দাঁড় করাতে পারেননি। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল, বেপরোয়া গতিতে জওহরলাল নেহরু রোড হয়ে পার্ক স্ট্রিটে ঢুকছে একাধিক লরি। যদিও ওই রাস্তায় কোনও সময়েই লরি ঢোকার কথা নয়। সেখানে থাকা এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘এই শীতের
রাতে কী ভাবে দাঁড় করাব? সাড়ে দশটার আগে কয়েকটা কেস করে রেখে দিয়েছি।’’

রাত ১টার হাজরা মোড় আবার এতটাই ফাঁকা যে, শুধু লরিই নয়, যে কোনও গাড়িই চলছেট্র্যাফিক সিগন্যাল ভেঙে, নিজের নিয়মে। সেখানে একটি পুলিশের ভ্যান দাঁড় করানো থাকলেও কোনও পুলিশকর্মী সে সময়ে ছিলেন না। একই অবস্থা ছিল হরিশ মুখার্জি রোড, ধর্মতলা মোড় এবং ডোরিনা
ক্রসিংয়ে। ধর্মতলায় একটি ফাঁকা পুলিশের গাড়ি দাঁড় করানো থাকলেও ডোরিনা ক্রসিংয়ে কিছুই ছিল না। ছিল না নাকা-তল্লাশির বন্দোবস্তও। বাকি শহরের মতো ইএম বাইপাস জুড়ে ফাঁকা ছিল পুলিশের
কিয়স্ক। উল্টোডাঙা মোড়ে অবশ্য রাত ১১টা নাগাদ নাকা-তল্লাশি চালাতে দেখা যায় পুলিশকে। এক জন সার্জেন্ট দাঁড়িয়ে কেস লিখছিলেন আর গাড়ি, মোটরবাইক ধরে
আনছিলেন দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। তবে লরির পরীক্ষা হচ্ছিল না। সিভিক ভলান্টিয়ারকে দিয়ে তো গাড়ি দাঁড় করাতে বারণ করেছে লালবাজার? প্রশ্ন থামিয়ে সার্জেন্ট বললেন, ‘‘করোনা থেকে সুস্থ হয়ে আজই
প্রথম ডিউটি করছি। এখনও অনেকে অসুস্থ। কাকে নিয়ে তা হলে কাজ হবে?’’

লালবাজারের এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘সকলে যাতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশ মেনে কাজ করেন, সেটা নিশ্চিত করতে বলব ট্র্যাফিক গার্ডের ওসিদের। তবে করোনার এই পরিস্থিতিতেও রাতের শহরে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মীই রাখা
হচ্ছে। কোথাও কম নেই। এর সঙ্গেই ক্যামেরা রয়েছে। অপরাধ করে পালিয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement